ভাড়াটের তথ্য নিয়ে ঠেকেও শেখেনি পুলিশ

পরিচয় গোপন করে ঘরভাড়া নিয়ে থাকার ঘটনা এই শহরে নতুন নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বছর দুয়েক আগেই, যখন লুকিয়ে থাকা শীর্ষ মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামকে গ্রেফতার হয়েছিল আসানসোল থেকে। কিন্তু, বাড়ির মালিকেরা বা পুলিশ ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য রাখায় উদ্যোগী হয়নি কেউই।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৫
Share:

পরিচয় গোপন করে ঘরভাড়া নিয়ে থাকার ঘটনা এই শহরে নতুন নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বছর দুয়েক আগেই, যখন লুকিয়ে থাকা শীর্ষ মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামকে গ্রেফতার হয়েছিল আসানসোল থেকে। কিন্তু, বাড়ির মালিকেরা বা পুলিশ ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য রাখায় উদ্যোগী হয়নি কেউই।

Advertisement

আসানসোল শহর ও তার আশপাসের এলাকায় রয়েছে বহু ভারী ও মাঝারি শিল্প সংস্থা। বাজার এলাকা হিসেবেও এই শহরের গুরুত্ব বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই কর্মসূত্রে এই শিল্পাঞ্চলে বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। তাঁদের অনেকেই এই শহরে নানা জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সাধারণত পরিচিত কারও সুপারিশে অথবা দালাল মারফত বাড়ির মালিকেরা কাউকে ভাড়া দেন। ভাড়াটেদের সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য হাতে নিয়ে তাঁদের ঘরভাড়া দেওয়ার চল এই শহরে একেবারেই নেই।

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে অবশ্য এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। আসানসোলের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিত্‌ ঘোষ বলেন, “বাড়ির মালিকেরা যদি ভাড়াটেদের তথ্য হাতে নিয়ে ভাড়া দেন, তবে তো দু’পক্ষেরই লাভ। তাতে প্রশাসনেরও সুবিধা হবে। প্রয়োজনে ভাড়াটেদের বিষয়ে সব তথ্যই হাতে এসে যাবে। তিনি জানান, বাড়ির মালিকদের এ ব্যাপারে সতর্ক করতে বিশেষ অভিযান চালানো হতে পারে। শহরের হোটেল, অতিথি ভবনগুলিতে আসা যাওয়ার যাবতীয় তথ্যও পুলিশের কাছে প্রতিদিন জমা থাকা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল শহরে বহু ছোট-বড় হোটেল আছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “শহরে প্রায় ৪২টি হোটেল আছে। অথচ, হাতে গোনা কয়েকটির তরফে অতিথি আসা-যাওয়ার তথ্য পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।” এডিসিপি( সেন্ট্রাল) বিশ্বজিত্‌বাবু বলেন, “এই নিয়ম হোটেলগুলিকে মানতেই হবে। শহরের সব হোটেলকেই নিয়মিত অতিথিদের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুলিশের এই নির্দেশ সমস্ত হোটেল মালিকের মেনে চলা উচিত বলে জানিয়েছেন আসানসোল হোটেল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুব্রত দত্ত। তবে তাঁর বক্তব্য, “যখনই দেশের কোথাও কোনও ঘটনা ঘটে, পুলিশ সক্রিয় হয়। অল্প কিছু দিন এই সক্রিয়তা দেখা যায়। তার পরে আবার ঢিলেমি। পুলিশের ধারাবাহিকতা রাখা উচিত।”

বছর দুয়েক আগেই আসানসোলের ধাদকা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মাওবাদী নেতা বিক্রমকে। জনবসতি কম, এমন একটি এলাকায় থাকত বিক্রম। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে দুই অভিযুক্ত শাকিল ও কওসর আসানসোল-রানিগঞ্জে যাতায়াত করত, তদন্তকারী অফিসারদের এই সন্দেহের কথা প্রকাশ পাওয়ার পরেই এই শিল্পাঞ্চলের বাড়ির মালিকেরা মনে করছেন, সতর্ক হওয়া উচিত তাঁদেরও। ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য রাখা উচিত, যাতে প্রয়োজন মতো তা পৌঁছে দেওয়া যায় পুলিশের কাছে। বিশেষ করে, ভিন্‌ রাজ্যের সীমানা যেহেতু এই শহরের কাছাকাছি, সে জন্য আরও সতর্কতার প্রয়োজন বলে তাঁদের মত। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, দুষ্কর্ম করে সীমানা পেরিয়ে চলে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তখন তাদের নাগাল পাওয়া মুশকিল হয়। তাই ভাড়াটে বা হোটেলের অতিথিদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশেরও সচেতনতা গড়ে তোলায় উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে মনে করছেন শহরবাসী।

দেরিতে হলেও খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের পরে পুলিশ ভাড়াটেদের তথ্য রাখার ব্যাপারে নড়েচড়ে বসায় খুশি জনপ্রতিনিধিরা। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই শহরে যদিও কখনও কিছু হয়নি, তবু এই উদ্যোগ ভাল। আমরা সহযোগিতা করব।” কুলটির বিধায়ক তথা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ উদ্যোগী হোক। আমরা সঙ্গে থাকব।” সীমানা এলাকার আর এক শহর সালানপুর পঞ্চায়েতের সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “শহরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ এগিয়ে এলে, আমরা পাশে থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন