ভরসা এই গিয়ার মাঠ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
মাঠ বলতে একটি। তারও অবস্থা বেশ খারাপ। রেল শহর অন্ডালে খেলাধুলোর হাল নিয়েও তাই ক্ষোভ বিস্তর।
নয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্ডাল থেকে কলকাতা ময়দানে খেলতে যেতেন অনেকে। এলাকার ছেলে জহর আঁকুড়ে, সঞ্জয় মাজি মোহনবাগান, ইস্ট বেঙ্গল, জর্জ টেলিগ্রাফের মত দলে নিয়মিত খেলেছেন। টাউন ক্লাব, ট্রাফিক জিমন্যাসিয়ামের মতো স্থানীয় কয়েকটি ক্লাব রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে যেত। কিন্তু সে সব এখন অতীত। একদা স্থানীয় ফুটবলে নাম-ডাক ছিল এরকম কয়েকটি ক্লাব এখন খেলা ছেড়ে দুর্গাপুজো, কালীপুজোতে মন দিয়েছে। চিড় ধরেছে ক্রীড়া সংগঠনেও। এক বছর আগে টাউন ক্লাব ভেঙে তৈরি হয়েছে অন্ডাল স্পোর্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। নতুন এই সংগঠনের কর্তা অনুপ নন্দী ১৯৭৪ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে চাম্পিয়ন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, “একটা ভাল মাঠ নেই। ছেলেরা অনুশীলন করবে কোথায়? তার মধ্যেও আমরা খুদেদের ফুটবল শেখাচ্ছি।”
অন্ডালের ক্রীড়া-সংস্কৃতি ধরে রাখার পথে অন্যতম অন্তরায় হল মাঠের অভাব। গোটা শহরে খেলার মাঠ বলতে পড়ে রয়েছে শুধু গিয়ার মাঠ। তবে সে মাঠের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই ঘেরা মাঠে জলের কোনও সংযোগ নেই। গ্যালারি নেই। এমনকি কোনও ছাউনি নেই। অসমান মাঠে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই মাঠে একটি কংক্রিটের শিলান্যাস ফলক পোঁতা হয়েছিল। এর ফলে মাঠটি কিছুটা ছোট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এই সব পরিকাঠামোগত সমস্যা নিয়েই অগ্রদূত সঙ্ঘ ও অন্ডাল স্পোর্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা এই মাঠে ফুটবলের অনুশীলন করে।
এলাকার বাকি মাঠগুলির মধ্যে নেতাজি বিদ্যাপীঠের মাঠ, সাউথ কলোনির ইয়ুথ ক্লাবের মাঠ, ওয়ার্কশপ কলোনির মাঠে আর খেলা হয় না। এর কোনটিতে তৈরি হয়েছে বাগান, কোথাও আবার বিদ্যালয় ভবন। ইয়ুথ ক্লাবের সদস্য চন্দ্রভানু দত্ত জানান, বছর দশেক আগে তাদের মাঠের বড় অংশ জুড়ে বাগান করেছে আরপিএফ। ফলে মাঠটি এখন শিশু উদ্যানে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্কশপ কলোনির মাঠে তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়। ফলে ওই মাঠের অস্তিত্বই প্রায় নেই। প্রতিযোগিতামূলক খেলা প্রায় বন্ধ। এ ছাড়া ১২ নম্বর রেল কলোনির মাঠ ও ট্রাফিক জিমন্যাসিয়ামের মাঠের মত কয়েকটি মাঠ আয়তনে ছোট। স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সদস্য রূপেশ যাদব জানান, ওই দু’টি ছোট মাঠে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল সম্ভব নয়। মাঠ না থাকায় দামোদর জিমন্যাসিয়াম, ইয়ং স্টার, সঙ্ঘশ্রী ক্লাব, চিত্তরঞ্জন বয়েজ ক্লাব, রেজিমেন্ট ক্লাবের সদস্যরা ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম খেলা ও পুজো করায় মন দিয়েছে।
আগে এলাকায় প্রচুর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হলেও এখন তা হাতেগোনা। ১৩ নম্বর রেল কলোনির নব যুবক সঙ্ঘ ও ১২ রেল কলোনির ইয়ং স্টার প্রতি বছর ছোট মাঠেই ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১২ রেল কলোনির ইউথ ক্লাবের উদ্যোগে হয় ফুটবল। এ বছর সদ্য গঠিত অন্ডাল স্পোর্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে গিয়ার মাঠে। কিন্তু এর মধ্যেই খেলা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্ডালের ক্লাবগুলি দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ নবীকরণ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক তাপস সরকার বলেন, “প্রায় দু’বছর হল অন্ডাল রেল শহরের কোনও ক্লাব মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নেই। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানালেও উত্তর পাইনি।”
স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের একাংশের ক্ষোভ, অন্ডালের বেশিরভাগ জমি রেলের সম্পত্তি হলেও সেগুলি দেখভালে তাদের নজর নেই। তাঁদের আরও অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই অন্ডালের ক্রীড়া সংস্কৃতির করুণ দশা দাঁড়িয়েছে। ইয়ুথ ক্লাবের সদস্য চন্দ্রভানু দত্ত, ট্রাফিক জিমন্যাসিয়াম ক্লাবের সদস্য সজল চট্টোপাধ্যায়দের ক্ষোভ, ওয়ার্কশপ কলোনির মাঠ, ট্রাফিক জিমন্যাসিয়ামের পাশের মাঠের মতো একটির পর একটি খেলার মাঠ রেল নিয়ে নিয়েছে। গিয়ার মাঠের সংস্কারের বিষয়েও রেল কোনও উদ্যোগ নেয়নি। যদিও অবহেলার অভিযোগ মানতে চাননি রেল কর্তৃপক্ষ। আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মূ বলেন, “খেলার মাঠ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ কখনও অভিযোগ জানায়নি। আগে অভিযোগ পাই তবে তো ব্যবস্থা নেব।”
(শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর অন্ডাল’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।