আলুর কোনও পদ আর ভাত, রোজ এই জোটে পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।
পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ মিড-ডে মিল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলো বর্ধমানের এক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
বর্ধমানের বৈকুন্ঠপুর ২ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ওই শিক্ষাকেন্দ্রটির নাম বিবেকানন্দ বর্ণমালা আদিবাসী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এটি আবাসিক স্কুল। মূলত আদিবাসী পড়ুয়ারাই এখানে পড়াশোনা করেন। মঙ্গলবার মিড-ডে মিল বিভাগের পরিদর্শক ওই স্কুলে গিয়ে নথিপত্র ও হিসেবে গরমিল খুঁজে পান। তারপরেই শিক্ষকদের কাছ থেকে দ্রুত হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।
জেলা স্কুল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর খাতায় কলমে ওই শিক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ জন ছাত্র দেখানো হলেও বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ৪০। তাদের মধ্যে ১০জন ছাত্রী রয়েছেন। অভিযোগ, মঙ্গলবার পরিদর্শনের সময় পরিদর্শক অরুণাভ দে-র কাছে মিড ডে মিল সংক্রান্ত কোনও হিসেব পেশ করতে পারেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের মিড-ডে মিলের কোনও হিসেব স্কুলে রাখা নেই। এমনকি পড়ুয়াদের হাজিরার কোনও নির্দিষ্ট হিসেবও নেই ওই শিক্ষাকেন্দ্রে।
ওই শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সভাপতি সনাতন টুডুর অভিযোগ, মিড-ডে মিল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই স্কুলে গোলমাল চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিড-ডে মিলের কোনও হিসেব রাখেন না। পড়ুয়াদের হয় ফ্যান ভাত না হলে আলু সেদ্ধ ভাত খাওয়ানো হয়। ওই শিক্ষাকেন্দ্রের মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরস্বতী টুডুরও অভিযোগ, “বেশিরভাগ দিন ভাতের সঙ্গে আলু রান্না হয়। অনেক সময় পাড়া থেকে চেয়ে এনে তরকারি রান্না করতে হয়।” তাঁরা জানান, আদিবাসী শ্রমজীবী পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য ২০০৯ সালে শিক্ষাকেন্দ্রটি তৈরি হয়। এখানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। আগে এই শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ২০০ জন পড়ুয়া পড়লেও খাওয়ার সমস্যার জন্য এখন সেই সংখ্যা প্রায় ৪০-এ নেমে গিয়েছে। একই কথা বলে পড়ুয়ারাও। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অর্জুন টুডুর কথায়, “দিনে তিন বার খাই। কিন্তু শুধু আলু দিয়ে ভাত খেতে হয়।” সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না মাহালির ক্ষোভ, “ মাছ, ডিম দূরের কথা, ভাতের সঙ্গে ডালও পাই না।”
যদিও হিসেবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ শিক্ষক কৌশিক রায়ের দাবি, তাঁরা মিড ডে মিলের সব হিসেব দু’দিনের মধ্যে সর্বশিক্ষা দফতরে পৌঁছে দিয়ে আসবেন। শঙ্করবাবুর দাবি, “মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের দিনে একবার খেতে দেওয়ার কথা। তার জায়গায় সারা দিনে তিন বার খেতে দিতে হচ্ছে। তাই মিড-ডে মিলের হিসেব মেলানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
স্কুলের মিড-ডে মিল সংক্রান্ত খাতাপত্র দেখে পরিদর্শক অরুণাভ দে বলেন, “তদন্ত করতে এসে ওই শিক্ষকদের কাছে আমি নিখুঁত হিসেব চেয়েছি। ওঁরা বলেছেন, দফতরে গিয়ে তা দিয়ে আসবেন। ওই হিসেব পেলেই নতুন করে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ঠিক কী হবে তা নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”