মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো চলছেই, বলছেন নেতারা

বিক্ষোভ দেখাতে গেলে অস্ত্র আইনে অভিযোগ। পথ অবরোধে সামিল হলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ। ঘটনাস্থলের আশপাশে না থাকলেও খুনের মামলা। খনি-শিল্পাঞ্চলে এমন মামলায় জড়ানোর অনেক অভিযোগ উঠেছে এর আগেও, আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ হওয়ার পরে দাবি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাই।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩০
Share:

সইশিকারি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

বিক্ষোভ দেখাতে গেলে অস্ত্র আইনে অভিযোগ। পথ অবরোধে সামিল হলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ। ঘটনাস্থলের আশপাশে না থাকলেও খুনের মামলা। খনি-শিল্পাঞ্চলে এমন মামলায় জড়ানোর অনেক অভিযোগ উঠেছে এর আগেও, আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ হওয়ার পরে দাবি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাই।

Advertisement

২০০০-এর গোড়ার দিকে জল সরবরাহ-সহ এক গুচ্ছ পরিষেবার দাবিতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আসানসোল পুরসভার তৎকালীন মেয়র সিপিএমের শ্যামল মুখোপাধ্যায়কে পুরভবনে ঢুকতে বাধা দেন বর্তমানে তৃণমূলের বর্ধমান জেলা কার্যকারি সভাপতি ভি শিবদাসন। তাঁর দাবি, সে দিন হঠাৎই তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ মেয়রের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে। আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের জেল-হাজত হয়। এর বছরখানেকের মধ্যেই আসানসোলের কুমারপুরে একটি নার্সিংহোমে রোগীমৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে পুরনো জি টি রোডের ভগৎ সিংহ মোড়ে অবরোধ করেন তৃণমূলের তিন বিধায়ক-সহ নেতা-কর্মীরা। শিবদাসন জানান, পুলিশ তিন বিধায়ক-সহ ২০ জনকে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিধায়কদের ছেড়ে দিলেও তিনি-সহ ১৭ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। সে বার জেল-হাজত হয়েছিল ১২ দিনের। শিবদাসনের দাবি, দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই অভিযোগ ছিল মিথ্যা।

১৯৯৯ সালে জামুড়িয়ার কেন্দাগ্রাম হাটতলায় এক বিকেলে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় সিপিএমের মোহিত বাউড়িকে। নিহতের স্ত্রী অভিযোগ দায়ের করেন, তৃণমূল নেতা মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাত জন তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। মুকুলবাবুর দাবি, যখন খুন হয়, সেই সময়ে তিনি কোলিয়ারি কার্যালয়ে ত্রৈমাসিক বোনাস কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ করছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানেন, এলাকায় সমাজবিরোধী হিসেবে পরিচিত সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক যুবক গুলি চালিয়েছিল। তবু আমরা খুন করেছি বলে অভিযোগ হয়।” তিনি জানান, তাঁর ভাই, তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ হয়। পুলিশ গ্রেফতার করলে জয়ন্ত মাস তিনেক জেল খাটেন। বাকিরা পরে জামিন নেন। মুকুলবাবুর অভিযোগ, “রাজনৈতিক উদ্দেশেই আমাদের নাম জড়ানো হয়েছিল।”

Advertisement

২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে জামুড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে বেরিয়ে খুন হন রবিন কাজী। তাঁকে গাড়ির চাকায় পিষে মারার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দিনু বাউড়িকে। সিপিএম নেতা মনোজ দত্ত অভিযোগ করেন, সে দিন যা ঘটেছিল সবই তৃণমূল কর্মীদের চোখের সামনে। অথচ, অভিযোগে দলের নেতা তথা সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, আরও দুই নেতা ও তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। মাস ছয় পরে মনোজবাবু ছাড়া বাকি তিন জন নেতাকে মামলা থেকে রেহাই দেন অভিযোগকারীই। ওই ভোটের কিছু দিন পরে জামুরিয়ার খাসকেন্দায় তৃণণূল-সিপিএম সমর্থকদের সংঘর্ষের সময়ে ডিওয়াইএফ সদস্য ভীমরাজ তিওয়ারি নিহত হন গুলিতে। সিপিএম নেতা মনোজবাবু বলেন, “আমাদের গণ সংগঠনের কর্মী ভীমরাজ মারা গেল, অথচ আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হল। ঘটনাস্থলে না থেকেও জেল খাটতে হল আমাকে।” এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয় তৃণমূল নেতা মুকুলবাবুর বিরুদ্ধেও। তাঁর দাবি, “আমি ছিলাম উখড়ায়। ফিরে এসে শুনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ হয়েছে আমার নামে।”

বাম আমলে শাসকপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার মিথ্যা মামলায় তাদের কর্মীদের নাম জড়ানোর অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। এখন সেই অভিযোগ উঠছে তাদেরই বিরুদ্ধে। তৃণমূল নেতা ভি শিবদাসনের যদিও দাবি, “আমরা একটিও মিথ্যা মামলা দায়ের করিনি।” তাঁদের আমলে তাঁরা কোনও ভুয়ো অভিযোগ করেননি বলে দাবি সিপিএমের মনোজবাবুর। আসানসোল আদালতের আইনজীবী সমীর ভট্টাচার্য, বীরেন মুখোপাধ্যায়েরা অবশ্য বলছেন, “বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার মামলা হলে জামিন অযোগ্য ধারা হয়ে যায়। জেলে পাঠিয়ে জব্দ করার মতলবেই নানা পক্ষ এমন কৌশল অবলম্বন করে আসছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন