বীরহাটায় রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে বাস। বাসের ছাদেও চলছে যাত্রী তোলা। ছবি: উদিত সিংহ।
যানজট সামলাতে শহরে বড় বাস ঢোকা নিষিদ্ধ হয়েছে বহুদিন। জিটি রোডেও একই নিয়ম। কিন্তু বাদ রয়ে গিয়েছে সদরঘাট রোড। শহরে চলা সাড়ে সাতশো বাসের অর্ধেকই চলে ও পথ দিয়ে। ফলে নিত্যদিনের যানজটে নাভিশ্বাস ওই এলাকার।
শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সদরঘাট রোডের শেষ প্রান্তে রয়েছে পূর্ত ভবন। প্রতিদিনই বহু সরকারি আধিকারিক ও সাধারণ মানুষ নানা কাজে সেখানে যান। কিন্তু যানজট এতটাই যে রাস্তা পার হতেই সময় চলে যায়। এ ছাড়া বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকা, আরমাবাগ, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে আসা বাসগুলিও এসে ওই বীরহাটা এলাকায় যাত্রীদের নামায়। তারপর ডান দিকে মুড়ে চলে যায় আলিশা বাসস্ট্যান্ডে। তারপরেই যাত্রীদের টানতে রিকশা, টোটো ও মিনিবাসগুলির মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। আটকে পড়েন পথচারীরা। বাধ্য হয়ে জ্যামজমাট বীরহাটাকে এড়িয়ে অলিগলির পথ ধরে বিভিন্ন গাড়ি, মোটরবাইক, সাইকেল। তাতে ওই এলাকার চারপাশের ছোট রাস্তাগুলিও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, সকালের দিকে সর্বমঙ্গলাপাড়া, ভাতছালা, কালীবাজার, বেড় মোড়, ছোটনীলপুর মোড়ের দশা একেবারে নট নড়নচড়ন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের অন্য অংশকে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে বাসমালিকদের ওই রাস্তা দিয়ে বাস চালানোর দাবি মেনে নিয়েছিলেন কর্তারা। পরিকল্পনা ছিল কিছুদিন বর্ধমানের তেলিপুকুর থেকে দক্ষিণ দামোদর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আরামবাগ থেকে আসা বাসগুলি জিটি রোড বাইপাস হয়ে চলে যাবে আলিশাতে। কিন্তু পরে ওই বাসগুলির পারবীরহাটা মোড় হয়ে যাতায়াতে রাজি হয়ে যায় প্রশাসন। তবে তা কতদিনের জন্য তার উত্তর মেলেনি। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “দক্ষিন দামোদরের দিক থেকে আসা বাসগুলিকে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে নিয়েছিলাম। আপাতত ওই সিদ্ধান্ত বদলের কোনও সম্ভবনা নেই। তবে যদি জনপ্রতিনিধিদের দিক থেকে ওই রাস্তা বাস চলাচলের জন্য ব্যবহারহ করতে না দেওয়ার প্রস্তাব আসে তাহলে তা বিবেচিত হবে।” তবে জেলাশাসকের মন্তব্য খুশি নন ভুক্তভোগী লোকজন। তাঁদের ক্ষোভ, জনপ্রতিনিধিদের তো ওই রাস্তা ব্যবহার করতে হয় না। ফলে এতগুলি বাস পরপর দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাতে শুরু করলে কী সমস্যা হয়, তাঁরা তা কি করে বুঝবেন?
পুলিশের অবশ্য দাবি, ওই রাস্তায় যানজট কমাতে যথেষ্ট চেষ্টা করছেন তারা। কোনও বাস বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী তুললেই ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু পুলিশের সংখ্যার অপ্রতুল হওয়ায় সমস্যা সামলানো যাচ্ছে না বলে তাদের দাবি। সম্প্রতি যানজট রুখতে টোটো বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তা যে খুব ফলপ্রসু হয়েছে এমনটা বলছেন না পুলিশ কর্তারাও। জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “বড় বাস ও টোটো কমিয়েও শহরে স্বাভাবিক যান চলাচলের ব্যবস্থা করা যায়নি।”
ট্রাফিক পুলিশেরও দাবি, মান্ধাতা আমলে পড়ে রয়েছে বর্ধমানের ট্রাফিক ব্যবস্থা। তাদের অভিযোগ, ক্রমবর্ধমান যানজট এড়াতে একটি মূল কন্ট্রোল রুম প্রয়োজন, যা শহরে নেই। কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জিটি রোডের উপর তিনটি সিগন্যাল পোস্ট বসানো হয়। তাছাড়া শহরের অন্য কোথাও লিগন্যাল পোস্ট নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে দ্রুত পৌঁছনোর মতো গাড়িও নেই ওই দফতরের। ভরসা তিনটি মোটরবাইক। তাতে দুই ট্রফৈিক ইন্সপেক্টার ও ওসি পদে থাকা এক আধিকারিক চড়েন। তাঁদের আরও দাবি, ঠিকমতো শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করতে আরও অন্তত ২৫জন পুলিশ কর্মী প্রয়োজন। না হলে শহরের ২৫টি ট্রাফিক পয়েন্টে যানজট সামলানো সম্ভব নয়।
এত না থাকায় যানজট মিটবে কীভাবে সেটাই প্রশ্ন শহরের।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-বর্ধমান’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১