‘মডেল স্টেশন’ জামুড়িয়া এখনও বিদ্যুৎহীন

চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রেল কথা রাখেনি। এমনই অভিযোগ করছেন অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত সাতটি স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, রেল বাজেটের কথা মতো জামুড়িয়া এখনও মডেল স্টেশন হয়নি। অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত সাতটি স্টেশনে পরিকাঠামোগত উন্নতিও হয়নি বললেই চলে। যদিও রেল কর্তাদের দাবি, অর্থ বরাদ্দ না হওয়াতেই কাজ শুরু করা যায়নি।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

তখন সন্ধ্যে নামছে আলোহীন জামুড়িয়া স্টেশন চত্বরে।—নিজস্ব চিত্র।

চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রেল কথা রাখেনি। এমনই অভিযোগ করছেন অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত সাতটি স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, রেল বাজেটের কথা মতো জামুড়িয়া এখনও মডেল স্টেশন হয়নি। অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত সাতটি স্টেশনে পরিকাঠামোগত উন্নতিও হয়নি বললেই চলে। যদিও রেল কর্তাদের দাবি, অর্থ বরাদ্দ না হওয়াতেই কাজ শুরু করা যায়নি।

Advertisement

২০১০-১১ আর্থিক বর্ষের রেল বাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জামুড়িয়া হল্ট স্টেশনকে মডেল রেল স্টেশন হিসেবে তৈরি করার কথা ঘোষণা করেন। তার পর হল্ট তকমা উঠে গিয়ে খাতায় কলমে সম্পূর্ণ স্টেশনের মর্যাদা পায় জামুড়িয়া। স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করেছিলেন, শীঘ্রই এই প্রান্তিক স্টেশনটির খোলনলচে বদলে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এখনও প্রায় কিছুই বদলায়নি। জামুড়িয়া স্টেশন চত্বরে এখনও তৈরি হয়নি যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও শৌচালয়। পানীয় জলের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। টিকিট কাউন্টার থেকে আশপাশের সব স্টেশনের টিকিট পাওয়া যায় না। প্ল্যাটফর্ম কংক্রিটের নয়। এমনকি এই স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। ফলে সূর্য ডুবলেই স্টেশন চত্বর ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। ট্রেনে ওঠানামা করতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। তবে শুধু জামুড়িয়া স্টেশনই নয়, আশপাশের রেল স্টেশনগুলির অবস্থাও তথৈবচ। অথচ, ২০১০-১১ সালের রেল বাজেটেই বলা হয়েছিল, খনি এলাকার রেল স্টেশনগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি করা হবে। তবে বাকি স্টেশনগুলিতে অবশ্য বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে রেলের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, “জামুড়িয়া হল্ট স্টেশনের বদলে জামুড়িয়া স্টেশন নাম হয়েছে। কাজ বলতে এইটুকুই।”

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৬৮ বছর আগে অন্ডাল থেকে যশিডি অবধি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল। তখন একটি স্টিম ইঞ্জিন দুটি যাত্রীবাহী কামরা নিয়ে অন্ডাল থেকে জামুড়িয়া হয়ে যশিডি পর্যন্ত যেত। ১৯৯৩ সালের শেষ থেকে এই ট্রেনটির গতিপথ ছোট করা হয়। ট্রেনটি তখন অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত যেত। অন্ডাল থেকে শুরু হয়ে সীতারামপুর পর্যন্ত মোট সাতটি স্টেশন রয়েছে। ১৯৯৬ সালের জুন মাস থেকে এই ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১১ সালে ফের অন্ডাল থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত এই ট্রেনটি ফের চালু হয়। তার পর এই চার বছরে ইকড়া স্টেশনে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্ম তৈরি ছাড়া এই রেলপথের সাতটি স্টেশনে প্রায় কোনও কাজ হয়নি।

Advertisement

খনি এলাকা হিসেবে পরিচিত এই রেলপথ কিন্তু রেলের খাতায় লাভজনক হিসেবেই পরিচিত। এই রেলপথের ঐতিহাসিক গুরুত্বও বেশ বেশি। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ যাদব, অনুপ ভট্টাচার্য, দিলীপ চট্ট্যোপাধ্যায়, সুবল সিংহরা জানান, সাধক বামাক্ষ্যাপা একবার অন্ডাল থেকে বৈদ্যনাথধাম (যশিডি) পর্যন্ত ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। টিকিট পরীক্ষক তাঁর কাছে টিকিট না পেয়ে তাঁকে ইকড়া স্টেশনে নামিয়ে দেন। বামাক্ষ্যাপা ট্রেন থেকে নেমে একটি শ্মশানে চলে যান। তারপরেই ট্রেনে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা যায়। কথিত আছে, এরপর ট্রেনের পাহারাদার টিকিট পরীক্ষককে সঙ্গে নিয়ে বামাক্ষ্যাপাকে শ্মশান থেকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি ট্রেনে চাপতেই ট্রেন চলতে শুরু করেছিল।

ইতিহাস রয়েছে। যাত্রী রয়েছে। কিন্তু চার বছর আগের পরিকল্পনা কী বাস্তবের মুখ দেখবে? পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ অধিকর্তা বিশ্বনাথ মুর্মুর আশ্বাস, “পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টাকার অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। টাকা বরাদ্দ হলেই পূর্ব ঘোষণা মতো কাজ শুরু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন