মন্দিরে চুরি চলছেই, ক্ষোভ পুলিশের ভূমিকায়

মূর্তি, গয়না থেকে মন্দিরের বাসনপত্র, চুরির ঘটনা চলছেই। গত তিন মাসে মন্তেশ্বর ব্লকের অন্তত ১৭টি মন্দিরে চুরি হয়েছে। যদিও পুলিশের ভূমিকা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। এখনও পর্যন্ত কোনও ঘটনার কিনারা হয়নি, কেউ গ্রেফতারও হয়নি। ক্ষোভ, আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। এ বছর শীতের শুরু থেকেই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের ঘটনা সামনে আসতে থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

ডিসেম্বরের শুরুতে চুরি হয়েছিল এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরেও। নিজস্ব চিত্র।

মূর্তি, গয়না থেকে মন্দিরের বাসনপত্র, চুরির ঘটনা চলছেই। গত তিন মাসে মন্তেশ্বর ব্লকের অন্তত ১৭টি মন্দিরে চুরি হয়েছে। যদিও পুলিশের ভূমিকা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। এখনও পর্যন্ত কোনও ঘটনার কিনারা হয়নি, কেউ গ্রেফতারও হয়নি। ক্ষোভ, আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও।

Advertisement

এ বছর শীতের শুরু থেকেই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের ঘটনা সামনে আসতে থাকে। ২৯ নভেম্বর মাঝেরগ্রাম এলাকায় রাস্তায় গাছ ফেলে কনেযাত্রীবোঝাই বাস আটকে লুঠতরাজ চলে। লুঠপাট চালানো হয় একটি গাড়িতেও। তবে এ ব্লকে দুষ্কৃতীরা সব থেকে বেশি সক্রিয় মন্দিরেই। শুক্রবার রাতেও বামুনপাড়া পঞ্চায়েতের কষা গ্রামে একটি মন্দিরের তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু সোনারুপোর গয়নার সঙ্গে মন্দিরের বাসনপত্রও চুরি গিয়েছে।

তবে এই লাগাতার চুরির ঘটনার শুরু ২৭ নভেম্বর থেকে। ওই রাতে পুড়শুড়ি এলাকার গোপীনাথ, ব্রজকালী, পঞ্চানন এবং শ্রীধর মন্দিরে একসঙ্গে চুরির ঘটনা ঘটে। সকালে সেবাইতেরা মন্দির খুলে দেখেন তালা ভাঙা। উধাও দেবদেবীর কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না। মন্দির থেকে কিছুটা দূরে কষ্টিপাথরের পঞ্চানন মূর্তিটিও পড়ে তাকতে দেখা যায়। এরপরে কাইগ্রাম এলাকার রাধাবিনোদ মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। সেখানে মন্দিরের একটি দরজা ভাঙতে পারলেও মূল মন্দিরের গেট না ভাঙতে পারায় মূর্তি এবং গয়নাগাটি বেঁচে যায়। তবে খোওয়া যায় কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র। ওই রাতেই এলাকার আরও একটি মন্দিরে চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। জোড়া চুরির রেশ কাটতে না কাটতেই মথুরা গ্রামের ফুটখানেকের প্রাচীন কালী মূর্তি চুরি যায়। চুরির ঘটনা ঘটে থানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরেও। ১০ ডিসেম্বর রাতে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে দেবীর রুপোর মুকুট, পৈতে, সোনার দুল-সহ বহু গয়না চুরি যায়। উধাও হয় শালগ্রাম শিলাটিও। দিন দশেকের মধ্যেই কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহলী গ্রামে রঘুনাথ মন্দির থেকে চুরি যায় গয়নাগাটি। মন্দিরের দুই সেবাইত ফাল্গুনি এবং লাল্টু রায় পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, গয়নাগাটির সঙ্গে আসল মুক্তোর দুটি হারও খোওয়া গিয়েছে। ১৭ জানুয়ারি থানা লাগোয়া একটি মন্দিরে ফের চুরি হয়। এরপরে হাটপাড়া তারামা মন্দিরেও হানা দেয় চোরেরা। অভিযোগ, মন্দিরের ৬টি তালা ভেঙে কয়েক ভরির রুপোর হার ও কয়েকগ্রাম ওজনের নথ নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

প্রায় প্রতি সপ্তাহে চুরির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। মন্তেশ্বরের বাসিন্দা কালীপদ চক্রবর্তীর দাবি, “প্রাচীন মন্দিরগুলির সঙ্গে বহু মানুষের আবেগ জড়িত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা।” আর এক বাসিন্দা গোপীনাথ ঘোষের অভিযোগ, “পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় কোনও মন্দির থেকে ফের চুরি হল না তো।” বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনের কর্তারাও। মন্তেশ্বকের তিনটি পঞ্চায়েত রয়েছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের মধ্যে। ওই কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, মন্দিরে চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষও স্বস্তিতে নেই। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষও বলেন, “কেন বারবার মন্তেশ্বরের নানা মন্দিরে চুরি হচ্ছে তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।”

কিন্তু বারবার একই ধরনের চুরির ঘটনার পরেও পুলিশ কেন দোষীদের ধরার কোনও সূত্রই খুঁজে পাচ্ছে না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, মন্দিরে চুরির ঘটনায় বেশ কিছু পুরানো অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুরনো জিনিস বেচাকেনার কারবার করেন যাঁরা তাঁদের কাছেও খোঁজখবর করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু তথ্য মিলেছে বলেও পুলিশের দাবি। এই চুরি চক্রে একাধিক দল জড়িত বলেও তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন