প্রচারে দলে দলে ভিড় জমালেও তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে হাজির থাকলেন হাতেগোনা কয়েক জন নেতা-কর্মী। জমায়েত এত কম দেখে জেলা তৃণমূলের (গ্রামীণ) সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও ক্ষোভ গোপন করতে পারেননি।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের বৈঠকে অনেক আগেই ঠিক হয় যে শুক্রবার তৃণমূলের বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের দুই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন। সেই কারণে স্বপনবাবু দলের কর্মীদের সকাল ১০টা নাগাদ টাউন হলে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা ১১টার পরেও সেখানে গোটা পঞ্চাশের বেশি তৃণমূল কর্মীকে দেখা যায়নি। তার মধ্যেই বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী টাউনহলের পাশ দিয়ে ঢাক ও ঢোল বাজিয়ে এক্কা গাড়ি করে মনোনয়ন জমা দিতে যান।
টাউন হলে এসে উপস্থিত কর্মীর সংখ্যা এত কম দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় স্বপনবাবুর। সেই সময়ে দলের বর্ধমান-২ ব্লকের কিছু কর্মী তাঁর কাছে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। স্বপনবাবু বলে ওঠেন, “ওসব কথা এখন বাদ দিন। ভোটের প্রচার কেমন হচ্ছে বলুন? এখনও পর্যন্ত ক’টি বাড়িতে গিয়েছেন?” উত্তরে এক কর্মী বলেন, “আমি তো প্রতি দিনই এলাকায় রয়েছি দাদা।” স্বপনবাবু পাল্টা বলেন, “আপনাদের এলাকায় ক’টি পরিবার বাস করে? দলের কত জন কর্মী রয়েছেন? সংখ্যা বলুন। সকলে মিলে বাড়ি ভাগ করে প্রচারে যান। তা হলে কারও উপর চাপ পড়বে না।” একই সঙ্গে উপস্থিত কর্মীদের ধমকে তিনি বলেন, “এ বার প্রতিটি বাড়িতে যেতে হবে। দলের ইস্তেহারের কথা বলতে হবে। কিন্তু সেদিকে কারও মন নেই। শুধু প্রার্থী গেলে হইচই করে ভিড় বাড়াচ্ছেন।”
এর মধ্যেই স্বপনবাবুর মোবাইলে জেলা তৃণমূল অফিস থেকে ফোন আসে। জানা যায়, দলের বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থীরা সেখানে অপেক্ষা করছেন। এরপরেই টাউন হল চত্বরে নিজের গাড়ি ফেলে রেখে স্বপনবাবু রিকশা চড়ে কালী বাজারের জেলা অফিসে যান। আধ ঘণ্টা পরে মিছিল নিয়ে ফেরেন। মিছিলের বাঁ দিকে বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতা, ডান দিকে বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। মাঝে স্বপনবাবু নিজে। কিন্তু সেই মিছিলেও মেরেকেটে জনা পঞ্চাশ তৃণমূল নেতা-কর্মী ছিলেন। অনেক তৃণমূল কাউন্সিলার ও নেতারই এ দিন দেখা পাওয়া যায়নি।
অবস্থা দেখে জেলা তৃণমূলের এক নেতার আক্ষেপ, ‘‘দল যখন ক্ষমতায় ছিল না তখন কর্মীদের মধ্যে আলাদা তাগিদ ছিল। এখন মনে হয় সেই তাগিদের অভাব হচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে।”