যানজট রুখতে শহরে বাস ঢুকতে মানা

শহরবাসী ও বাস মালিকদের আপত্তি উড়িয়ে শেষ পযর্ন্ত বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢোকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে প্রায় আট বছর আগে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা সেটাকেই বাস্তবায়িত করছি। আশা করি মানুষ আমাদের পক্ষে থাকবেন।”

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:০৭
Share:

১৫ জুনের পরে শহরের রাস্তায় আর দেখা যাবে না এ ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

শহরবাসী ও বাস মালিকদের আপত্তি উড়িয়ে শেষ পযর্ন্ত বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢোকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “শহরকে যানজটমুক্ত করতে প্রায় আট বছর আগে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা সেটাকেই বাস্তবায়িত করছি। আশা করি মানুষ আমাদের পক্ষে থাকবেন।”

Advertisement

এর আগে জেলা বাসমালিক সমিতি ওই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে ১১ তারিখে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যে শহরে বাস ঢোকা বন্ধ হলে, তারা রাস্তা থেকে বাসই তুলে নেবেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পরে ওই সমিতির সম্পাদক তুষার ঘোষ বলেন, “প্রশাসনের অনুরোধে ১৫ তারিখ থেকে বাস তুলে নিচ্ছি না। তবে মনে হয়, খরচ সামলাতে না পেরে বাস রাস্তাতেই ফেলে রেখে বাড়ি চলে যেতে হবে আমাদের।” তবে জেলা পরিবহন আধিকারিক প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আপাতত এই সিদ্ধান্তের আয়ু একমাস। একটি মনিটরিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।”

বর্ধমান শহরের দু’দিকে দুটি নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন আগেই। তবে কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সে দুটি। বছরখানেক আগে ওই স্ট্যান্ডদু’টিকে কাজে লাগাতে প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শহরের ভেতরে কোনও বাস ঢুকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বাসমালিকদের আপত্তি এবং পুরবাসীর অসুবিধার কথা ভেবে শেষ পযর্ন্ত প্রশাসন ওই সিদ্ধান্ত কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখে। তবে এ বার ঠিক হয়েছে, ১৫ জুন থেকে শহরের ভেতরে আর বাস ঢুকতে দেওয়া হবে না। সিদ্ধান্তের কথা শুনে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “মানুষের অসুবিধা হয় এমন কোনও কাজ করা হবে না। বাসস্ট্যান্ডে নামা যাত্রীদের শহরের নানা প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা না করে শহরে বাস না ঢুকতে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।” এ দিনই কলকাতার ট্রাম কোম্পানির অফিসে পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলার আরেক মন্ত্রী তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “শহরে বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন পরিবহন মন্ত্রী। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

Advertisement

তবে শহরবাসী এবং নানা কাজে শহরে আসা মানুষজনের প্রশ্ন একটাই-- কী এই বিকল্প ব্যবস্থা? জেলাশাসক জানিয়েছেন, ১৫ জুন থেকে রাস্তায় নামছে প্রায় ৭৫টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা। সঙ্গে থাকছে মিনিবাস। মিনিবাসের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২০টি করা হবে বলেও জানান তিনি। এগুলিই বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে নামা মানুষদের গন্তব্য পৌঁছে দেবে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, অটো বা রিক্সায় বরাবরই যানজট হয়। আর তার সঙ্গে ১২০টি মিনি বাস সারাদিন পথে থাকলেও তো প্রচন্ড যানজট হবে। ফলে শহরের পরিস্থিতির বদল খুব একটা ঘটবে কি না সে প্রশ্ন রয়েই যায়। বর্ধমান মিনিবাস ওয়েলফেয়ার সমিতির সহ-সম্পাদক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহরের বুকে ৫২টি মিনিবাস চলাচল করে। তাদের পক্ষে ৭০-৭২ হাজার মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু শহরে প্রতিদিন নানা কাজে তিন লক্ষ মানুষ আসেন। মিনিবাস না বাড়ালে তাঁদের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।”

বর্ধমান থেকে কলকাতার ধর্মতলা ও করুণাময়ী রুটে চালাচলকারী দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসগুলিকেও শহরের ভেতর দিয়ে যাতাযাত করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এ খবরে ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীদের দাবি, যদি ওই বাসগুলি নবাবহাট থেকে ছেড়ে জিটি রোড বাইপাস দিয়ে যাতায়াত করে তাহলে কাঞ্চননগর, তেলিপুকুর ইত্যাদি এলাকায় স্টপেজ দেওয়া হোক। এ প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী ও জেলাশাসক। তবে বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দক্ষিণ দামোদর এলাকায়। জেলায় প্রায় ৭৫০টি বাস চলাচল করলেও, দক্ষিণ দামোদর দিয়ে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াগামী বাসের সংখ্যা ধরলে তা ৩৫০তে এসে দাঁড়ায়। ওই বাসগুলিকেও তেলিপুকুরে থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তেলিপুকুর থেকে মানুষ কীভাবে শহরের নানা প্রান্তে পৌঁছবেন, তা জানানো হয়নি। বাস মালিকদের একাংশের দাবি, তেলিপুকুরে বাস থামানোর সিদ্ধান্ত না বদলালে, দক্ষিণ দামোদরের মানুষ আর বাসে চড়বেনই না, মেট্যাডোর, ভ্যানে চড়ে যাতায়াত করবেন। ফলে ওই এলাকায় বাসের ভবিষ্যত অন্ধকার।

তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, প্রশাসন ১৫ জুন থেকে বর্ধমান শহরের বুকে বাস চলাচল ঠেকাতে মরিয়া। এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ জানান, ওই দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করে সমস্ত বাস নবাবহাট, উল্লাস ও তেলিপুকুরে থামিয়ে দেওয়া হবে।

ফলে ১৫ জুন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কতখানি কার্যকর হয় সেদিকেই তাকিয়ে শহরবাসী। জেলাশাসক বলেন, “বাস না ঢোকায় আপাতত কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কিন্তু ওই দুটি বাসস্ট্যান্ড ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যানজট কমলে মানুষই উপকৃত হবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন