রং উঠে মুদ্রার রূপ বেরোতেই পালাল যুবকেরা

ভরদুপুরে ১০৮ শিবমন্দিরের সামনে ঘোরাফেরা করছিল দুই যুবক। মুঠোয় কিছু পুরনো মুদ্রা। মুদ্রার উপর ঝাপসা দেবদেবীর ছবি। পিছনে আবছা হরফে লেখা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। স্থানীয় একজনকে কয়েনগুলি প্রাচীন মুদ্রা বলে বিক্রির চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু কেনার আগে সন্দেহ হওয়ায় এক সোনার দোকানের মালিককে মুদ্রাগুলি দেখাতেই ইংরেজ আমলের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে পিতলের সাধারণ মুদ্রা। মুহূর্তে চম্পট দেয় ওই দুই যুবকও।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
Share:

নকল মুদ্রা। নিজস্ব চিত্র।

ভরদুপুরে ১০৮ শিবমন্দিরের সামনে ঘোরাফেরা করছিল দুই যুবক। মুঠোয় কিছু পুরনো মুদ্রা। মুদ্রার উপর ঝাপসা দেবদেবীর ছবি। পিছনে আবছা হরফে লেখা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। স্থানীয় একজনকে কয়েনগুলি প্রাচীন মুদ্রা বলে বিক্রির চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু কেনার আগে সন্দেহ হওয়ায় এক সোনার দোকানের মালিককে মুদ্রাগুলি দেখাতেই ইংরেজ আমলের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে পিতলের সাধারণ মুদ্রা। মুহূর্তে চম্পট দেয় ওই দুই যুবকও।

Advertisement

শুক্রবার দিনেদুপুরে প্রতারণার এমন চেষ্টায় সাড়া পড়ে গিয়েছে কালনা শহরে। পুলিশের দাবি, লিখিত অভিযোগ হয়নি ঠিকই, তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছেন তাঁরা। এর আগেও পিতলের মূর্তি ঘষেমেজে সোনার মূর্তি বলে প্রতারণার চেষ্টা হয়েছে কালনায়। স্কুল শিক্ষক থেকে রেলের কর্মী অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেন। ২০১২ সালে পুলিশ এই চক্রের বেশ কয়েকজন পাণ্ডাকে গ্রেফতার করে। তারপর বছরখানেক নির্বিঘ্নে কাটলেও সম্প্রতি আবার ধরন পাল্টে প্রতারকেরা সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ।

এ দিন ১০৮ শিবমন্দিরের সামনে লুঙ্গি ও হাফ হাতা জামা পরা দুই যুবককে ইতস্তত ঘুরতে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনেরই হাতের মুঠোয় কিছু পুরনো মুদ্রা ছিল। জিজ্ঞেস করাতে তারা জানায়, কাছাকাছি রাজবাড়ির মাঠে মাটি কাটার সময় মাটির নীচ থেকে ওই কয়েকগুলি পায় তারা। আবার কাউকে কাউকে বলে হাওড়ার এক এজেন্টের কাছ থেকে ওই প্রাচীন মুদ্রাগুলি কিনেছে তারা। দাম বলে কয়েন পিছু চার হাজার টাকা। কৌতুহলী হয়ে এলাকার অনেকেই কয়েনগুলি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। শেষে প্রতাপ সাহা নামে এক যুবক মুদ্রাগুলি কেনার ব্যাপারে মনস্থির করেন। প্রতাপবাবু জানান, বারবার খুঁটিয়ে দেখেও মুদ্রাগুলি যে নকল তা বুঝতে পারেননি তিনি। কিন্তু দরাদরি করতেই চার হাজারের মুদ্রা দু’হাজারে বিক্রি করতে রাজি হয়ে যায় ওই দুই যুবক। তাতেই সন্দেহ হয় তাঁর। মুদ্রাগুলি ও ওই দুই যুবককে নিয়ে স্থানীয় একটি গয়নার দোকানে যান তিনি। দোকানমালিক একটি শক্ত পাত্রে কয়েকগুলি ঘষতেই পাউডার জাতীয় পদার্থ উঠে আসে। বেরিয়ে পড়ে পিতল। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখের নিমেষে দোকান থেকে পালায় ওই দুই যুবক। ঘটনা জানাজানির পরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অন্য বাসিন্দারাও। এলাকারই রাজশেখর কোলে নামে এক ব্যক্তি বলেন, “প্রাচীন জিনিসের প্রতি অনেকেরই দুর্বলতা রয়েছে। দুষ্কৃতীরা সেটাকেই কৌশলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।”

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে মন্তেশ্বরের এক ব্যবসায়ীকে অল্প টাকায় সোনার কয়েন বিক্রির লোভ দেখিয়ে কালনা২ ব্লকের রাহাতপুর গ্রামে ডেকে নিয়ে আসে কয়েকজন যুবক। তারপর জোর করে বেশ কয়েক হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। পরে ওই ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট এলাকার একটি চক্র এর পিছনে রয়েছে। ফিরোজ শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এর মাস পাঁচেক আগেও নকল গয়না পালিশ করে সোনা হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল। তবে পুরনো মুদ্রা দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা এই প্রথম বলে পুলিশের দাবি।

কালনা থানার এক আধিকারিক জানান, পিতলের মূর্তি সোনার বলে চালানোর একটি ঘটনায় সম্প্রতি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এই চক্রটি কিভাবে শহরে ঢুকল তারও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন