রিকশার শহরে নামছে ব্যাটারি চালিত অটো

শহরের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে চলেছে গণবাহনের সংজ্ঞা। আগামী কাল, রবিবার থেকে বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মিনিবাসের পাশাপাশি ব্যটারি চালিত রিকশার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, নবাবহাট, আলিশা ও তেলিপুকুরের বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাত্রীরা দেখতে পাবেন, তাঁদের জন্য মিনিবাসের পাশাপাশি অপেক্ষায় রয়েছে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এই রিকশা দূষণরোধী, পরিবেশবন্ধু। কারণ তা চলার সময় শব্দ হবে না, বিষাক্ত ধোঁয়াও নেই। এছাড়া টানা রিকশার থেকে এনেক কম ভাড়াতেই মানুষ পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০১:০২
Share:

পথে নামার অপেক্ষায়। বর্ধমানের শাঁখারিপুকুরে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

শহরের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে চলেছে গণবাহনের সংজ্ঞা।

Advertisement

আগামী কাল, রবিবার থেকে বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মিনিবাসের পাশাপাশি ব্যটারি চালিত রিকশার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

প্রশাসনের দাবি, নবাবহাট, আলিশা ও তেলিপুকুরের বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাত্রীরা দেখতে পাবেন, তাঁদের জন্য মিনিবাসের পাশাপাশি অপেক্ষায় রয়েছে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এই রিকশা দূষণরোধী, পরিবেশবন্ধু। কারণ তা চলার সময় শব্দ হবে না, বিষাক্ত ধোঁয়াও নেই। এছাড়া টানা রিকশার থেকে এনেক কম ভাড়াতেই মানুষ পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত জানান, ১৫ জুন থেকে আপাতত ২০টি পরিবেশবান্ধব অটো চালানো শুরু হলেও, ভবিষ্যতে বর্ধমানের ৩৫টি ওয়ার্ডেই দুটি করে এমন অটো চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে।

Advertisement

এই পরিবেশবান্ধব অটোই এ বার বর্ধমানের নতুন গণবাহন হতে চলেছে। এত দিন শহরের কোথাও যেতে হলে নিজের মোটরবাইক বা গাড়ি না থাকলে ভরসা ছিল রিকশা। বর্ধমান পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাজার দেড়েক রিকশা ছাড়াও চারপাশের পঞ্চায়েত এলাকাগুলি থেকে হাজার-হাজার রিকশা প্রতিদিন শহরে ঢোকে। বহু দিন ধরেই শহরবাসীর অভিযোগ, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের নানা জায়গায় যেতে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকে রিকশাগুলি। বিকল্প না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়েই যেতে বাধ্য হন যাত্রীরা। ফলে একদিকে যেমন মানুষকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়, অন্যদিকে রিকশার স্রোতে শহরে তীব্র যানজট হয়। কার্যত শহরের গতি স্তব্ধ করে বিসি রোড, জিটি রোড, বিবি ঘোষ রোড, হাসপাতাল রোড, সদরঘাট রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি রিকশা। একবার এক বিদেশিনী তো বর্ধমানকে ‘রিকশার শহর’ নামই দিয়েছিলেন।

বর্ধমানে দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের দখলে থাকা পুরসভা অবশ্য শহরে অটো চালু করার তেমন কোনও পরিকল্পনা করেনি। বরং বিগত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান আইনূল হক প্রায়ই বলতেন, ‘‘অটো চালানো মানে শহরের পরিবেশ ধ্বংস করা আর যানজটের কবলে ফেলে দেওয়া। আমরা চাই না কলকাতার বিভিন্ন এলাকার মতো অটো রাস্তায় জট পাকিয়ে মানুষের যাতাযাতে বাধা দিক।” ফলে রিকশার দাপাদাপি বেড়েছে বই কমেনি। এক সময় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দিয়ে মিনি বাসের রুট অনুমোদন করেও সিটু অনুমোদিত রিকশা ইউনিয়নের আন্দোলনের জেরে তা প্রত্যাহার করে নিতেছিল পুরসভা। অথচ ওই রুটে মিনি বাস চালানো গেলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা অসংখ্য রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের পক্ষে কম খরচে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হত।

তবে এ বার বোধহয় পরিস্থিতি বদলাবে। পুরপ্রধান জানান, পুরসভা শহরের বুকে ওই পরিবেশবান্ধব অটো চালানোর জন্য টেন্ডার ডেকেছিল। তাতে বরাত পেয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। পুরসভার কাছ থেকে ওই রিক্সা চালানোর অনুমোদনের চিঠি নিয়ে যে ব্যক্তি যাবেন, তাঁকেই অটো বিক্রি করবে সংস্থাটি। প্রতি অটোতে চালক ছাড়া চার থেকে ছ’জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ঘন্টায় ২৪ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিতে চলা ওই যানগুলি পৌঁছে যাবে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। ভবিষ্যতে হয়তো পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে পড়বে। কিন্তু রুজি হারানোর ভয়ে রিকশা চালকেরা যদি বিক্ষোভে নামেন? স্বরূপবাবু বলেন, ‘ এই অটো চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শহরের মানুষের দিকে তাকিয়ে। অটো চালাতে দেওয়া না হলে, পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে। সর্বোপরি রয়েছেন মানুষ। তাঁরাই রিকশাচালকদের আন্দোলন ঠেকাবেন।”

জেলার কোনও শহরেই এ ধরনের পরিবেশবান্ধব অটো চলাচলের নজির নেই। ওই অটো সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার উৎপল দাসের কথায়, “এতদিন বর্ধমানে না চললেও দিল্লি, ওড়িশা, হরিয়ানা, পঞ্জাব, বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এই পরিবেশবান্ধব অটো চলছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে চলছে রাজ্যের হাওড়া, হুগলি, দিঘা ও বহরমপুরে। যেহেতু পেট্রোল বা ডিজেল লাগেনা ফলে ওই অটো চালাতে পরিবহন দফতরের অনুমতি লাগে না। তাই কেউ কোনও অনুমতিও নেন না। তবে বর্ধমানে আমরা পুরসভার অনুমতিপত্র নিয়ে আসা লোকেদেরই ওই অটো বিক্রি করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন