রাজনৈতিক দলাদলির ছায়া পড়েছে রানিগঞ্জের খেলার মাঠে। ফলে প্রায় এক বছর ধরে এই ব্লকে বন্ধ রানিগঞ্জ জোনালের ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতা। এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে রানিগঞ্জ জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের লোকজন। অপর দিকে স্টেডিয়াম কমিটি রয়েছে সিপিএমের দখলে। গোটা বছরে কোনও খেলা না হওয়ায় এই দুই কমিটিই দায় চাপিয়েছে একে অপরের উপর। স্টেডিয়াম কমিটির অভিযোগ, স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষমতা জোর করে দখল করেছে তৃণমূল। বর্তমানে ওই সংস্থার অফিস শুধুই আড্ডাঘরে পরিণত হয়েছে।
জোনাল স্পোটর্স অ্যাসোসিয়েশনের পাল্টা দাবি, প্রায় সব সদস্যর সম্মতিতেই তৈরি হয়েছে নতুন কমিটি। স্টেডিয়াম কমিটি মাঠের পাশের ঘর ব্যবহার করতে না দেওয়াতেই কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাচ্ছে না। আসানোসোল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমল সরকারের আক্ষেপ, “এই প্রথম কোনও ক্রীড়াবর্ষে রানিগঞ্জ জোনালের মধ্যে ফুটবল ও ক্রিকেটের মধ্যে দুটি জনপ্রিয় খেলা অনুষ্ঠিত হল না।”
রবীন সেন স্টেডিয়াম হল রানিগঞ্জের একমাত্র সরকারি খেলার মাঠ। এই মাঠটির দায়িত্বে রয়েছে সিপিএম পরিচালিত রানিগঞ্জ পুরসভা। জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সহ সভাপতি সিপিএম ঘনিষ্ঠ মলয় রায়ের অভিযোগ, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তৃণমূল কর্মীরা দলীয় ঝান্ডা নিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে রানিগঞ্জ জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের কর্তৃত্ব দখল করে নেয়।
মলয়বাবুর অভিযোগ, “তারপর থেকে নতুন কমিটি ফুটবল ও ক্রিকেট কোনও খেলাই আয়োজন করতে পারেনি। খেলা নিয়ে অবশ্য নতুন কমিটির কোনও আগ্রহ আছে বলেও মনে হয় না।” পুরনো কমিটির সদস্যদের আরও অভিযোগ, অ্যাসোসিয়েশনের দখল নেওয়ার পরে তৃণমূল পুরনো কমিটির সদস্যদের আলোচনাতেও ডাকেনি। উল্টে অফিসে গেলে অপমান করা হয়েছে। বর্তমানে ওই অফিসে শুধুই এলাকার তৃণমূল নেতাদের আড্ডা দিতে দেখা যায়।
যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে জোনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের তৃণমূল প্রভাবিত বর্তমান কমিটি। বর্তমান কমিটির সম্পাদক তথা রানিগঞ্জের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলের দাবি, “তাই ৯৫ শতাংশ সদস্যর সম্মতিতে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও রানিগঞ্জ পুরসভা নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম কমিটি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না।”
আসোসিয়েশনের সম্পাদক সাগর মুখোপাধ্যায় জানান, স্পোটর্স অ্যাসোসিয়েশনের বিধি অনুযায়ী এক বার পুরপ্রধান ও এক বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদাধিকার বলে সভাপতি মনোনীত হন। এ বারেও তাই হয়েছে।
তিনি বলেন, “রানিগঞ্জ পুরসভা এরপরেও আমাদের কমিটিকে অবৈধ বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে স্টেডিয়ামের শুধু মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে। কিন্তু স্টেডিয়ামের কোনও ঘর দেওয়া যাবে না। কিন্তু ঘর ছাড়া কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা এ বছর ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা বন্ধ রেখেছি। তবে জোনাল অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতাটি করা গিয়েছে।”
রানিগঞ্জের সিপিএম পুরপ্রধান অনুপ মিত্র অবশ্য বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বিষয়টির জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন।