মুকুল-মিঠুনের সভার আগে অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম ঘুরে দেখছেন মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
রেলের জমিতে সভা করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট না মেলার কারণে সভাস্থল বদলাচ্ছে তৃণমূল ও সিপিএম। তবে, সভার জায়গা বদলালেও প্রস্তুতিতে খামতি রাখছে না কোনও দলই।
আগামী ২৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলীতে সভা করার কথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওই সভা হওয়ার কথা ছিল সমুদ্রগড় রেল ময়দানে। কিন্তু রেলের অনুমতি মেলেনি। জেলা তৃণমূলের দাবি, ওই মাঠে সভা করার জন্য প্রশাসনের থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে রেলের মাঠে মাটি ও বালি ফেলে সভাস্থল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। জেলা তৃণমূল (গ্রামীণ) সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “সভার প্রস্তুতির জন্য আমাদের প্রায় ষাট হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা হঠাৎ জানতে পারি, রেলের কিছু কর্তা মাঠ পরিদর্শন করতে এসে সভার নানা খুঁটিনাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর পরেই আমরা সভাস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই। ওই একই দিনে স্থানীয় নিমতলা মাঠে হবে দলনেত্রীর সভা।”
একই ভাবে সিপিএমকেও সভাস্থল পরিবর্তন করতে হয়েছে। সিপিএম সূত্রে খবর, আগামী ২৩ এপ্রিল, বুধবার, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতের সভাস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে এই সভাটি হওয়ার কথা ছিল পূর্বস্থলী থানার মাঠে। এই জমিটি রেলের অধীন। কিন্তু রেলের অনুমতি না মেলায় সভাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পারুলিয়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি মাঠে। সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল বলেন, “আমরা পূর্বস্থলী থানার মাঠে সভা করব বলেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু প্রশাসন মারফত জানতে পারি রেল ওই মাঠে সভা করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেবে না। তাই আমরা ওই জায়গার বদলে পারুলিয়ায় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সমুদ্রগড় রেল স্টেশনের এক কর্তা বলেন, “সভার জন্য মাঠের অনুমতির বিষয়টি উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি তাঁরাই দেখছেন।”
তবে, জায়গা বদলালেও সভা সফল করতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে জেলার তৃণমূল ও সিপিএম নেতারা। দু’দলেরই লক্ষ্য সভায় ভাল জমায়েত করা। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিমতলা মাঠের সভায় এক লাখ কর্মী-সমর্থকের জমায়েত করানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। মাঠ ভর্তি হয়ে গেলে মানুষ যাতে মাঠ লাগোয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে দলনেত্রীর বক্তব্য শুনতে পারেন তার জন্য সভাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত লাগানো হবে মাইক। জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, দলনেত্রীর সভায় পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রতিটি বুথ থেকে মানুষ আসবেন। এছাড়াও কালনা ও পাশের জেলা নদিয়ার শান্তিপুর, নবদ্বীপ, রানাঘাট থেকেও দলীয় কর্মী-সমর্থকরা দলনেত্রীর কথা শুনতে আসবেন। তীব্র গরমের মধ্যে ভর দুপুরে সভা হওয়ার কারণে সভাস্থলে থাকবে ঠান্ডা সরবত খাওয়ার ব্যবস্থা। সরবত আনার জন্য আনা হবে ৩০ হাজার জলের পাউচ। ইতিমধ্যেই সরবত বানানোর জন্য এসে গিয়েছে ৩০ টিন আখের গুড়। সরবত ছাড়াও থাকবে পানীয় জলের ট্যাঙ্কার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগের দিন, ২৩ এপ্রিল, বুধবার, কালনা মহকুমার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে আরও একটি সভা করবে তৃণমূল। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা অভিনেতা ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের। সোমবার, অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেন তৃণমূল নেতা ও কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ও মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “প্রায় বারো বছর পরে মিঠুন কালনায় আসছেন। তারপরেই আসবেন দলনেত্রী। এই দুই সভা ঘিরে দলীয় কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে রয়েছে।”
সভায় ভিড় নিয়ে সিপিএমও আত্মবিশ্বাসী। সিপিএম নেতাদের আশা, বৃন্দা কারাতের সভায় উপচে পড়বে মাঠ। জেলা সিপিএমের এক নেতার দাবি, “আমাদের কর্মীরা মাটি কামড়ে লড়ছেন। তার প্রমাণ মিলবে পারুলিয়ার সভায়।”