পুলিশের আলোচনাচক্র

রাস্তা দখল থেকে বেহাল ট্রাফিক, সরব বাসিন্দারা

জাতীয় সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি থেকে কারখানার গেটে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যপুলিশের সামনে নানা সমস্যা নিয়ে সরব হলেন আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নানা এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মসূচি পালন করছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share:

জাতীয় সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি থেকে কারখানার গেটে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যপুলিশের সামনে নানা সমস্যা নিয়ে সরব হলেন আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নানা এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মসূচি পালন করছে পুলিশ। শনিবার দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহ এবং আসানসোলের রবীন্দ্রভবনে নাগরিকদের সঙ্গে দু’টি আলোচনাচক্রের আয়োজন হয়। পুলিশকর্তারা ছাড়াও ছিলেন শহরের জন প্রতিনিধিরা। দুর্গাপুরে যেমন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) এস গুপ্ত, দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের সিইও পি কে সিংহ প্রমুখ। আসানসোলের অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন পুলিশ কমিশনার জানান, পাসপোর্ট সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য এসএমএস পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এর ফলে কাগজপত্র দ্রুত পরীক্ষা করে পাসপোর্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। আবেদনকারীর হয়রানিও কমবে।”

দুর্গাপুরের ফরিদপুরের বাসিন্দা বিজয় কুমার অভিযোগ করেন, জাতীয় সড়কে বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাতে সাড়ে ৯টার পরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, বহু কারখানার কর্মী রাতের পালিতে কাজে যাওয়ার জন্য জাতীয় সড়ক পেরোন। ট্রাফিক পুলিশ বা সিগন্যাল না থাকায় রাস্তা পারাপারে মুশকিলে পড়েন তাঁরা। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানান, কী ভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আরও বেশি সময় ট্রাফিক সিগন্যাল ও পুলিশের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি। এর পরে প্রশ্ন আসে এইচএফসি কলোনি কোনও থানায় এলাকায় পড়ছে, তা নিয়ে। এক নাগরিক জানা, ওই কলোনির একটি অংশ বর্ধমান জেলা পুলিশের অন্তর্গত কাঁকসা থানার মধ্যে পড়ে। এলাকা থেকে সেই থানার দূররত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। অথচ, বিধাননগর ফাঁড়ি বা নিউটাউনশিপ থানা সেখান থেকে কয়েকশো মিটার। ফলে, আইনের গেরোয় পড়ে সাধারণ মানুষকে ছুটতে হয় কাঁকসায়। কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ আসতেও সময় লাগছে। দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ও কমিশনারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানান।

Advertisement

নানা ব্যাপারে পুলিশের ভূমকিা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাগরিকেরা। দুর্গাপুর বণিকসভার সাধারণ সম্পাদক রমাপ্রসাদ বণিক অভিযোগ করেন, রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে বিভিন্ন কারখানার সামনে দুষ্কৃতীরা তোলাবাজি করে। পুলিশকে বারবার আবেদন করলেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। সিটি সেন্টারের বাসিন্দা পরিমল অগস্তি অভিযোগ করেন, এলাকায় প্রায় দিনই চুরি হচ্ছে। অথচ পুলিশের কোনও ব্যবস্থা নজরে পড়ছে না। তাঁর আরও অভিযোগ, “সিটি সেন্টারের আনাচে-কানাচে গজিয়ে ওঠা কিছু স্পা, বিউটি পার্লারে অসামাজিক কাজকর্ম হয়। অথচ, পুলিশ কিছু করে না।” কমিশনার এ সব খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। বেনাচিতি বাজারে এক বার হকার উচ্ছেদের পরে পুলিশ আর নজর না দেওয়ায় ফের রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এক বাসিন্দা। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, অবৈধ হকারদের ফের তুলে দেওয়া হবে।

আসানসোলের আলোচনাচক্রে বাসিন্দারা শহরের রাস্তায় কমবয়সী ছেলেদের দ্রুত গতিতে মোটরবাইক চালানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, অত্যন্ত জনবহুল রাস্তায় এ ভাবে বাইক ছোটানোর ফলে মাঝে-মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে। শহরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। পুলিশ কমিশনার জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। শহরের কয়েক জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বড় গাড়ি থেকে পণ্য ছোট গাড়িতে চাপিয়ে শহরের অন্যত্র পরিবহণের সময়ে পুলিশ অযথা জরিমানা করে। এ ছাড়া রানিগঞ্জে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি একটি বিকল্প রাস্তা চালুর অনুরোধও জানান সেখানকার ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক তাঁদের আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে পরিকল্পনার মধ্যে আনা হয়েছে। শহরের বেশ কিছু এলাকায় পাইপ ফাটিয়ে জল চুরির অভিযোগও জানান বাসিন্দারা। পুলিশ কমিশনার জানান, কোথায় জল চুরি হচ্ছে, নির্দিষ্ট ভাবে জানালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন