রাস্তা নেই, মেলেনি বিদ্যুৎ আঁধারে পড়ে আমানিডাঙা

গ্রামে ঢুকতে-বেরোতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মেঠো পথ ঠেঙানো ছাড়া গতি নেই। তাই আসতে ভয় পান আত্মীয়-স্বজনেরাও। ভোট আসে-যায়। বারবার অনুনয়-আবেদনেও ফল হয় না। বিধায়ক থেকে সাংসদ, কেউই তাঁদের এই অবস্থার খোঁজ রাখেন না, অভিযোগ দেবশালা পঞ্চায়েতের আমানিডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

বুদবুদ শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৩
Share:

আলপথই ভরসা। ছবি: বিকাশ মশান।

গ্রামে ঢুকতে-বেরোতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মেঠো পথ ঠেঙানো ছাড়া গতি নেই। তাই আসতে ভয় পান আত্মীয়-স্বজনেরাও। ভোট আসে-যায়। বারবার অনুনয়-আবেদনেও ফল হয় না। বিধায়ক থেকে সাংসদ, কেউই তাঁদের এই অবস্থার খোঁজ রাখেন না, অভিযোগ দেবশালা পঞ্চায়েতের আমানিডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের।

Advertisement

বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই গ্রামে প্রায় ২০টি আদিবাসী পরিবারের বাস। প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই বাসিন্দা সোম সোরেন জানান, ছোট থেকে দেখছেন, গ্রামে ঢোকা-বেরোনোর পথ নেই। পিচ রাস্তা থেকে প্রায় মাঠের আল ধরে যাতায়াত করতে হয়। দু’দিক দিয়ে যাওয়া যায় গ্রামে। কাঁকসার পিয়ারিগঞ্জ অথবা বুদবুদ থানার কাঁকড়া গ্রামদু’দিকেই দূরত্ব এক। কাঁকড়ার দিক দিয়ে যেতে গেলে পেরোতে হয় কুনুর নদী ও ডুলে খাল। গরুর গাড়ি বা হাঁটা ছাড়া আর উপায় নেই। বাসিন্দারা আরও জানান, কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে গরুর গাড়ি অথবা খাটে করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। রাতে অসুবিধায় পড়তে হয়। আর বর্ষায় যদি কুনুর নদীর জল বাড়ে, কাঁকড়ার দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। গ্রামবাসীরা জানান, চাষের সময়ে খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মাঠের উপর দিয়ে গরুর গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। তখন হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। অসুস্থদের খাটে অথবা কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। সব থেকে অসুবিধায় পড়তে হয় গর্ভবতীদের নিয়ে। এলাকাবাসী জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন হালের জন্য গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান হলে আত্মীয়েরা আসতে ভয় পান। গোঁসাই মুর্মু, সনাতন সোরেনরা অভিযোগ করেন, বারবার অনেকের কাছে রাস্তার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু ফল মেলেনি।

সমস্যা শুধু রাস্তা নয়। গ্রামে নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা। প্রায় পাঁচ বছর আগে খুঁটি পোঁতা হলেও তার লাগানো হয়নি এখনও। গ্রামের বধূ লক্ষ্মী সোরেন, মালতী সোরেনরা জানান, রেশন আনতে যেতে হয় দেবশালা গ্রামে। কেরোসিন পেলে তবে জ্বলে আলো। কিন্তু বর্ষায় কুনুর নদীর জল বাড়লে আর রেশন আনতে যাওয়া যায় না। অন্ধকার হয়ে যায় গ্রাম।

Advertisement

গ্রামের কয়েকজন ছেলে-মেয়ে পিয়ারিগঞ্জের স্কুলে যায়, প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে। দশম শ্রেণির সুমিত্রা সোরেন, পঞ্চম শ্রেণির সুখলাল সোরেনরা বলে, “বর্ষায় আল ধরে যাতায়াত করতে কষ্ট হয়। তাছাড়া সাপের ভয় তো আছেই।” বেলডাঙার বাসিন্দা কেষ্ট মুর্মু বলেন, “রাতবিরেতে কোনও দুর্ঘটনার খবর পেলেও যেতে পারি না।” গ্রামে থাকার মধ্যে আছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কাঁকড়া গ্রাম থেকে সেখানে আসেন কর্মী লুতফা খাতুন। তিনি জানান, বর্ষায় কুনুরের জল বাড়লে তাঁকে পিয়ারিগঞ্জ হয়ে ঘুরে যেতে হয়। এই নানা সমস্যাতেও বাপ-ঠাকুরদার ভিটে ছাড়তে নারাজ এই বাসিন্দারা।

আমানিডাঙার সমস্যা নিয়ে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা এলাকার সাংসদ রামচন্দ্র ডোম জানান, বিষয়টি ঠিক ভাবে তাঁর জানা নেই। আগে জানলে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতেন। তিনি বলেন, “যদি ফের সাংসদ হই, তবে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।” এই কেন্দ্রে এ বারের তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরা জানান, তিনি তাঁর কেন্দ্রের এমন অনেকগুলি প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরেছেন। তিনি বলেন, “এই এলাকাটি ঠিক জানা নেই। তবে জানার চেষ্টা করছি।” এলাকায় গিয়ে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বাস তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন