লাগামছাড়া অটো-দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শহর

চলার কথা থাকলেও অনেক রুটে তারা চলে অনিয়মিত। রুটে না গিয়ে মোটা টাকায় ভাড়ায় যাওয়ার জন্য বসে থাকে অনেকে। অনেকে আবার চলাচল করছে বৈধ অনুমতি ছাড়াই। এ সবের সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্ব্যবহারকখনও যাত্রী তোলা নিয়ে বাসের কর্মীদের সঙ্গে, কখনও আবার ধাক্কা মারার পরে জখম মোটরবাইক আরোহীর সঙ্গে। দুর্গাপুর শহরে অটো চালকদের এমন দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ মানুষ।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০১:৪১
Share:

শনিবার অটোচালকদের হাতে জখমেরা। —নিজস্ব চিত্র।

চলার কথা থাকলেও অনেক রুটে তারা চলে অনিয়মিত। রুটে না গিয়ে মোটা টাকায় ভাড়ায় যাওয়ার জন্য বসে থাকে অনেকে। অনেকে আবার চলাচল করছে বৈধ অনুমতি ছাড়াই। এ সবের সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্ব্যবহারকখনও যাত্রী তোলা নিয়ে বাসের কর্মীদের সঙ্গে, কখনও আবার ধাক্কা মারার পরে জখম মোটরবাইক আরোহীর সঙ্গে। দুর্গাপুর শহরে অটো চালকদের এমন দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ মানুষ।

Advertisement

শুক্র ও শনিবার শহরে দু’টি ঘটনায় অটোচালকদের হাতে আক্রান্ত হন দুই মোটরবাইক আরোহী। শুক্রবার রানা ঘোষ নামে এক ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ করেন, মোটরবাইকে চড়ে স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ইস্পাতনগরীর জেএম সেনগুপ্ত রোড ধরে। ট্রাফিক আইন ভেঙে তাঁর মোটরবাইকে ধাক্কা মারে একটি অটো। তিনি প্রতিবাদ করতেই অটোচালক চড়াও হয়ে মারধর ও গালিগালাজ করে। আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে চালক অটো নিয়ে পালায়। শনিবার দুপুরে আবার সিটি সেন্টারের একটি সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় অটোর ধাক্কায় জখম হন মোটরবাইক আরোহী, বেনাচিতির বাসিন্দা মলয় দত্ত ও তাঁর বান্ধবী পল্লবী জানা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় সেই অটোচালক দিলীপ বড়ুয়া অন্য কয়েক জন অটোচালকদের ডেকে তাঁদের মারধর শুরু করে। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে জখম হন রাজেশ তিওয়ারি নামে এক যুবক। পুলিশ পৌঁছলে অটো চালকেরা পালায়। জখম তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর মহকুমায় বর্তমানে অটোর সংখ্যা ৯৬০। সবগুলিই সিএনজি চালিত। এর মধ্যে প্রায় তিনশো চলে গ্রামীণ এলাকায়। বাকি সব ক’টি শহরে। শহরের মোট ৫০টি রুটে সেগুলির চলার কথা। কিন্তু অভিযোগ, বহু রুটেই অটো চলে না। চললেও অনিয়মিত। রুটে না গিয়ে চড়া ভাড়া নিয়ে ‘রিজার্ভ’ যাওয়ার জন্য বসে থাকেন বহু অটোচালক। বহু অটোয় আবার রুটের উল্লেখও নেই। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কোন রুটে সেগুলি চলে। অভিযোগ, প্রায় ১৩০টি অটো চলছে ‘পারমিট’ ছাড়াই। আরও পাঁচশো অটোর জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

মিনিবাস মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, পরিবহণ দফতরের আইন ভেঙে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছেন অটোচালকেরা। যাত্রীদের অভিযোগ, অটোচালকদের একাংশ তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। দুর্গাপুর স্টেশনের অটোচালকদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাতে ‘রিজার্ভ’ যেতে চাইলে চড়া ভাড়া হাঁকেন তাঁরা। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে সন্ধ্যা নামলেই অটোর আর দেখা মেলে না বলেও অভিযোগ করেন শহরবাসীর। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যাত্রীদের দাবি, শহরে অটোচালকেরা সবাই শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন। নিয়মিত চাঁদা দেন। কোনও ব্যাপারে প্রতিবাদ করলেই সে কথা তাঁরা মুখের উপরে বলে দেন তাঁরা। অসহায় লাগে নিজেদের।

অটোচালকদের একাংশের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত বাকি অটো চালকেরা। প্রবীণ এক অটোচালকের কথায়, “শহরে সিএনজি অটো চালু হয় ২০০৮ সালে। তখন অটোর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০টি। এমনও হয়েছে, যাত্রীরা স্বাচ্ছ্যন্দের কথা ভেবে মিনিবাস ছেড়ে অটোয় যাতায়াতের চেষ্টা করতেন। এখন অনেকেই আমাদের ভুল বোঝেন।” দুর্গাপুরে অটোচালকদের সংগঠনটি দেখার দায়িত্বে রয়েছেন আইএনটিটিইউসি নেতা শান্তনু সোম। ‘দুর্গাপুর সিএনজি অটো অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শান্তনুবাবুর অবশ্য দাবি, “অটোচালকদের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অটোচালক আক্রান্ত হলে তবেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তা নেন। দু’টিই বেআইনি।” তবে তিনি জানান, অটো চালকদের অনেকেই নতুন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে সচেতনতা শিবির আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে অটো চালকেরা কী করবেন এবং কী করবেন না, সে সম্পর্কে বোঝানো হবে। কোনও অবস্থাতেই তাঁরা যেন আইন নিজের হাতে না নেন, তা জানানো হবে।

এর পরেও পরিস্থিতি পাল্টায় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় যাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন