লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি, ক্ষুব্ধ জেলার চালকল মালিকেরা

সারা রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে এক লক্ষ মেট্রিক টন। তার মধ্যে শুধু বর্ধমানেই ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। লেভির চাল আদায়ে বর্ধমানের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা এই হারে বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ জেলার চালকল মালিক সমিতি। গত বার সারা রাজ্যে লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্ধমানের জন্য তা ছিল এক লক্ষ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সে বার আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক লক্ষ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৬
Share:

সারা রাজ্যে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে এক লক্ষ মেট্রিক টন। তার মধ্যে শুধু বর্ধমানেই ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। লেভির চাল আদায়ে বর্ধমানের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা এই হারে বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ জেলার চালকল মালিক সমিতি।

Advertisement

গত বার সারা রাজ্যে লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্ধমানের জন্য তা ছিল এক লক্ষ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সে বার আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল এক লক্ষ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। এ বার রাজ্য সরকারের তরফে লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধার্য করা হয়েছে। সারা রাজ্যের ক্ষেত্রে যা করা হয়েছে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন। জেলা চালকল মালিক সমিতির সম্পাদক দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে লেভি এত বেশি বাড়ানোর প্রতিবাদ জানাব।”

খাদ্য দফতর অবশ্য আশা করছে, বাড়তি লেভি আদায় করতে সমস্যা হবে না। বর্ধমান জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধনকুমার পাঠকের দাবি, গত বার জেলায় লেভি আদায়ের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ ছিল খোলা বাজারে ধানের দাম। চাষিদের কাছ থেকে যে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছিল, তা ছিল কুইন্টাল প্রতি ১৩১০ টাকা। খোলা বাজারে ধানের দাম গত বার ছিল ১৫০০-১৫৫০ টাকা। ফলে, কম দামের জন্য চাষিরা চালকলে ধান বিক্রিতে রাজি ছিলেন না। তার জেরে ধান কিনতে না পেরে শ’দেড়েক চালকল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাধনবাবু বলেন, “এ বার যেহেতু আমন ধানের পর্যাপ্ত ফলন হবে, তাই বাজারে ধানের দাম ততটা বাড়বে না। অন্য দিকে সহায়ক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬০ টাকা। ফলে লেভির চাল অতিরিক্ত কেনা সম্ভব হবে।”

Advertisement

বর্ধমান ছাড়া রাজ্যের আরও চারটি জেলা হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের উপরে অতিরিক্ত লেভি আদায়ের চাপ থাকে প্রতি বার। প্রতিটি জেলাই গত বার লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছিল। হুগলি লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ শতাংশ, বীরভূম ৬৬ শতাংশ, বাঁকুড়া ৪৩ শতাংশ ও পশ্চিম মেদিনীপুর ৫৫ শতাংশ লেভি আদায় করেছিল। বর্ধমান আদায় করেছিল ৭১ শতাংশ। বর্ধমান শুধু গত বছর নয়, তার আগের তিন বছরেও লেভি আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আধিকারিকেরা দাবি করেছেন, গত বারের মতো লেভি না আদায় হওয়ার পরিস্থিতিতেও বর্ধমান যেহেতু অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিল, তাই এই জেলার লেভি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তুলনায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আশা, এ বার বর্ধমানে লেভি আদায়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জেলায় ৩৫০টি চালকলকে ইতিমধ্যে লেভি কতটা দিতে হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে খাদ্য দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি চালকলে কতটা ধান থেকে চাল উত্‌পাদিত হয়, তা দেখেই স্থির করা হয়েছে এই লক্ষ্যমাত্রা। ফলে, চলতি বছরে ছোট চালকলকে ৬৫০ মেট্রিক টন ও বড় চালকলগুলিকে ১৪০০ মেট্রিক টন লেভি দিতে হবে। প্রতি দিন মোট কত ধান কত জন চাষির কাছ থেকে কেনা হচ্ছে, তা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিতেও হচ্ছে চালকলগুলিকে।

চালকল মালিক সমিতির অন্যতম সহ-সম্পাদক জয়দেব বেতালের দাবি, “আমরা বেশি লেভি দিতেই পারি। কিন্তু চাষিদের ধান কেনার সময় যে পরিমাণ ধান বাদ যায়, তার কারণ ব্যাখ্য করতে চালকলগুলিতে উপস্থিত থাকতে হবে খাদ্য দফতরের প্রতিনিধিদের। অন্যথায় আমাদের পক্ষে চাষিদের বুঝিয়ে ধান কেনা সম্ভব হবে না।” খাদ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য জানান, এ ব্যাপারে চাষিদের ইতিমধ্যে সচেতন করা হচ্ছে। কী হারে ধান বাদ যায়, তার হিসেবও চালকলগুলির সামনে টাঙিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন