কলেজের ঘরেই শুশ্রুষা চলছে প্রহৃত হেমন্ত চক্রবর্তীর। নিজস্ব চিত্র।
অধ্যাপিকাকে চড় মারার প্রতিবাদ করায় কলেজের মধ্যেই মার খেতে হল এক ছাত্রকে, টিএমসিপির বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠল শহরের বিবেকানন্দ কলেজে। ওই ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছে এক ছাত্রীও। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে কলেজের তৃণমূল ছাত্র সংসদ।
সপ্তাহ দুয়েক আগে এই কলেজেই দুই ছাত্রছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে প্রতিবাদ করায় কলেজ গেটে মারধর করা হয়েছিল দর্শন বিভাগের শিক্ষিকা সাত্বকী পোদ্দারকে। তখনও অভিযোগ ছিল টিএমসিপির ছেলেদের বিরুদ্ধেই। সাত্বকীদেবীর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন অধ্যক্ষ, অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। এ দিনের প্রহৃত ছাত্র হেমন্ত চক্রবর্তীও ছিল তাঁদের মধ্যে। অভিযুক্ত ছাত্র বিকাশ দাসকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কর্মবিরতিও শুরু করেছিলেন শিক্ষকেরা। নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন সাত্বকীদেবীও। ওই ছাত্রকে বহিষ্কার করার পরে সমস্যা কিছুটা মিটেছিল।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে টিচার্স রুম থেকে বেরিয়ে কমন রুমের দিকে যাচ্ছিলেন বাংলার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হেমন্ত চক্রবর্তী। তখনই ইউনিয়ন রুম থেকে বেরিয়ে টিএমসিপির একদল ছেলে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারে বলে অভিযোগ। মারধরের মাত্রা বাড়লে হেমন্তকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে আরও এক বাংলার ছাত্রী। তাকেই টিএমসিপি সমর্থক কয়েকজন ছাত্রী মারধর করে বলে অভিযোগ। চিত্কার-চেচাঁমেচি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন অধ্যাপক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা। তাঁদের দেখেই অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীরা পালায় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশে খবর পাঠান টিচার-ইন-চার্জ জাহাঙ্গির হোসেন। আড়াইটে নাগাদ কলেজে পৌঁছে হেমন্তকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। তবে আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। সন্ধ্যা নাগাদ চড় মারায় অভিযুক্ত বিকাশ দাস ও টিএমসিপির কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন হেমন্ত।
এ দিন টিচার-ইন-চার্জ জাহাঙ্গির হোসেন ও বাংলা বিভাগের এক অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গোস্বামী অভিযোগ করেন, “সাত্বকীদেবীকে সমর্থন করে যে ক’জন ছাত্রছাত্রী এগিয়ে এসেছিল, তাদের একজন ছিল হেমন্ত। ওই কারণেই তাঁর এ অবস্থা করা হল।” ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন অন্য শিক্ষকেরাও। সাত্বকীদেবীও বলেন, “আমায় যাঁরা সমর্থন করেছেন তাঁদের মারধর করার ঘটনার নিন্দা করছি। এখন কলেজের ছেলেমেয়েরাও বুঝতে পারছে টিএমসিপির স্বেচ্ছাচারীতা।” কলেজের একাংশ ছাত্রছাত্রীও এ দিনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, ছাত্র সংসদের ছেলেরা রোজই ইচ্ছেমতো কাজকর্ম করে। কিন্তু ভয়ে প্রতিবাদ করা যায় না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি। সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ করে তারা দাবি করেছে, এ দিন ওই শিক্ষিকাকে সমর্থন করে হেমন্ত চক্রবর্তী-সহ কিছু ছাত্র তাদের হুমকি দিয়েছে। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ হাজরা বলেন, “একটি গণ্ডগোল হয়েছে শুনেছি। আমি কলেজে ছিলাম না। তাই ঠিক কী হয়েছে জানিনা। তবে ছাত্র সংসদের কেউ ঘটনায় জড়িত নয় বলেই শুনেছি।” টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “এ ধরণের কোনও ঘটনার কথা শুনিনি। এবিভিপি ও বামপন্থী মনোভাবাপন্ন কিছু অধ্যাপক মিলে টিএমসিপির বিরুদ্ধে কুত্সা করার চেষ্টা করছে। সামান্য কিছু হলেই সেটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে।” এসএফআইয়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র অবশ্য দাবি, “সাত্বকীদেবীকে নিগ্রহের পর থেকেই তাঁকে যাঁরা সমর্থন করেছিল, তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হেমন্তকে মারধর তারই চরম পরিণতি।” তাঁর আরও অভিযোগ, অধ্যাপিকাকে মারধরে জড়িত বিকাশও এ দিন মুখে কালো কাপড় বেঁধে হেমন্তকে মারধর করে। প্রদীপ হাজরা অবশ্য বিকাশের কলেজে হাজির থাকার কথা মানতে চাননি। ওই কলেজের এক শিক্ষক জ্যোতির্ময়বাবু আরও জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, অধ্যাপক-ছাত্রদের মারধর, কলেজে বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে আজ, বুধবার কর্মবিরতি করবেন তাঁরা। বিষয়টি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ও উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে বলেও তাঁর দাবি।