শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী নেই, বিপাকে কেতুগ্রামের স্কুল

স্কুল রয়েছে। পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষিকা নেই। এমনই হাল কেতুগ্রামের দুই ব্লকের দুই স্কুলের। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের গোপালপুর ললিতা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। কিন্তু শিক্ষিকা আছেন মাত্র ছ’জন। নেই কোনও করণিক। ফলে ছাত্রী পড়ানোর সঙ্গেই স্কুলের অন্যান্য কাজও করতে হয় ওই স্কুলের শিক্ষিকাদের। একই সমস্যা কেতুগ্রাম ২ ব্লকের বিল্লেশ্বর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এখানে ছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে চারশোর কাছাকাছি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৩
Share:

স্কুল রয়েছে। পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষিকা নেই। এমনই হাল কেতুগ্রামের দুই ব্লকের দুই স্কুলের।

Advertisement

কেতুগ্রাম ১ ব্লকের গোপালপুর ললিতা সুন্দরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। কিন্তু শিক্ষিকা আছেন মাত্র ছ’জন। নেই কোনও করণিক। ফলে ছাত্রী পড়ানোর সঙ্গেই স্কুলের অন্যান্য কাজও করতে হয় ওই স্কুলের শিক্ষিকাদের। একই সমস্যা কেতুগ্রাম ২ ব্লকের বিল্লেশ্বর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এখানে ছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে চারশোর কাছাকাছি। প্রধান শিক্ষিকাকে ধরে স্কুলে শিক্ষিকা রয়েছেন ছ’জন। তবে এখানে অবশ্য করণিক রয়েছেন। শিক্ষিকার অপ্রতুলতার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগে দু’টি স্কুলেই পড়ুয়াদের ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তৈরি হচ্ছে অচলাবস্থা।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষিকা না থাকায় ওই দু’টি স্কুলে প্রতি দিন সব ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক জন শিক্ষিকাকে দিনে ৫-৬টি করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। যদিও তার পরেও সমস্যা মিটছে না। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় ছাত্রীদের একটা বড় অংশ স্কুলে আসছে না। বিল্লেশ্বর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী ভাস্করের ক্ষোভ, “আমরা তো এখনও রুটিনই তৈরি করে উঠতে পারিনি। অর্ধেক শিক্ষিকা নিয়ে কী ভাবে রুটিন তৈরি করব?” অন্য দিকে, ছ’জন শিক্ষিকার সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষক ও শিক্ষিকার সাহায্যে স্কুলের পঠন-পাঠন কোনও রকমে টিকিয়ে রেখেছে গোপালপুরের স্কুলটি।

Advertisement

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতার জন্য সম্প্রতি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তার উপর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আপোষ বদলি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। যদিও গোপালপুরে স্কুলটির সমস্যা নতুন নয়। একে শিক্ষিকার অভাব, তার উপর এই স্কুলে গত দু’বছর ধরে করণিক না থাকায় সমস্যা দ্বিগুন হয়েছে। পড়ানো ছাড়াও স্কুলের ভর্তি, নিয়মতি রক্ষণাবেক্ষণ, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের কাজকর্ম, খরচের হিসেব রাখা-সহ দৈনন্দিন কাজগুলিও তাঁদের করতে হয়। এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে বর্তমানে একজন শিক্ষিকাও নেই। গোপালপুরের স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুকান্ত রায়চৌধুরী বলেন, “শিক্ষা দফতর আমাদের জানিয়েছে, নতুন চাকরি পাওয়া শিক্ষিকারা আমাদের স্কুলে আসতে চাইছেন না। এর ফলে সমস্যা বেড়েছে।” ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা বিশ্বাসের ক্ষোভ, “খুব কষ্ট করে আমাদের স্কুল চালাতে হচ্ছে। তবে এত কষ্টের মধ্যেও আমরা কিন্তু পড়ুয়াদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখি।”

২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রতি স্কুলে ৩৫ জন পড়ুয়া পিছু একজন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে অনেক স্কুলেই এই অনুপাত মানা হয় না। কাটোয়ার সহকারী স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিপদভঞ্জন মণ্ডল বলেন, “অনেক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সমস্যা থাকলেও, ওই দুটি স্কুলের সমস্যা খুবই উদ্বেগজনক।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ জানান, তিনি এর আগে গোপালপুর ললিতা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে বিধানসভায় সরব হয়েছেন। বিধায়ক বলেন, “স্কুলের সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে শিক্ষিকা নিয়োগের আবেদন করেছি। ব্যক্তিগত ভাবেও রাজ্য শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন