শোলার জোগান কম, টান প্রতিমার সাজে

কিছুদিন কড়া রোদ, তারপরেই নাগাড়ে বৃষ্টিপ্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় টান পড়ছে দুর্গা প্রতিমার সাজে। যে শোলার সাজে দেবী মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন, সেই শোলার উৎপাদনেই ভাটা পড়েছে এ বার। শিল্পীরা জানান, ভাল শোলা পেতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। গয়নার খরচও এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে দুই থেকে চার গুণ। ফলে বহু পুজো উদ্যোক্তাই সাবেক শোলার সাজের বদলে রঙিন কাপড়ে কম শোলা দিয়ে সাজ চাইছেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০২
Share:

চলছে সাজ তৈরি। নিজস্ব চিত্র।

কিছুদিন কড়া রোদ, তারপরেই নাগাড়ে বৃষ্টিপ্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় টান পড়ছে দুর্গা প্রতিমার সাজে।

Advertisement

যে শোলার সাজে দেবী মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন, সেই শোলার উৎপাদনেই ভাটা পড়েছে এ বার। শিল্পীরা জানান, ভাল শোলা পেতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। গয়নার খরচও এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে দুই থেকে চার গুণ। ফলে বহু পুজো উদ্যোক্তাই সাবেক শোলার সাজের বদলে রঙিন কাপড়ে কম শোলা দিয়ে সাজ চাইছেন।

হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও উত্তর দিনাজপুরের কিছু এলাকায় সাধারণত শোলার চাষ হয়। তা ছাড়াও পতিত জমি, জলাজমি কিংবা বড় রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে শোলা উৎপন্ন হয়। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুরুতে শোলা চাষে উৎসাহ দেখাননি শিল্পীরা। পাশাপাশি জলাজমি বা নয়ানজুলিতেও জল কম থাকায় শোলা কম হয়েছে। পরে বর্ষা নামলে শোলার চাষ শুরু করেন অনেকে। কিন্তু শোলা থেকে জল থেকে ঘরে তোলার সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি নামায় শোলার ক্ষতি হয় বলে চাষিদের দাবি। এ অবস্থায় একমাত্র ভরসা শিল্পীদের ঘরে মজুত শোলা। শিল্পীদের দাবি, শোলার অভাবে রথের পর থেকেই পুজো উদ্যোক্তা কিংবা কুমারটুলির মৃৎশিল্পীদের কাছ থেকে দেবীর সাজের জন্য বরাত নেওয়া তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক পুজো উদ্যোক্তা আবার শোলার গয়নার দাম বাড়ায় কাপড়ের উপর কম শোলা দিয়ে সাজের বরাত দিচ্ছেন শিল্পীদের।

Advertisement

কাটোয়ার বনকাপাশি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শিল্পীদের ঘরে শোলা সরবারহ করেন হুগলির জনাই রোডের বাসিন্দা বিশু বাইন ও জগদীশ বাইন। তাঁরা বলেন, “প্রথমে বৃষ্টি কম, তারপর অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় শোলার উৎপাদন অনেকটাই কম। ঘরে মজুত শোলা দিয়েই দেবীর গয়না তৈরি চলছে।” শিল্পীরা জানান, সাাধারণত রথের পর থেকেই শোলার চাহিদা বাড়তে থাকে। একের পর এক বরাত আসতে থাকে। শিল্পীরা ১০০ থেকে ১৫০টি পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে গয়নার বরাত নেন। এ ছাড়াও শোলার তৈরি ছোট-বড় দুর্গারও বরাত থাকে শিল্পীদের হাতে।

শোলা শিল্পী আদিত্য মালাকারের বড় ছেলে, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী, আশিস মালাকার বলেন, “শোলার যে দাম ধরে প বায়না নেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে দাম অনেকটাই বেশি পড়ছে।” শোলা সরবরাহকারীরা জানান, আড়াই হাত সুতোর বান্ডিলের ভাল শোলার দাম গত বছর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। সেই শোলাই এ বছর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। শোলা শিল্পী প্রসাদ ঘোষ বলেন, “বরাত নিতে পারছি না। থার্মোকল, কাপড়, জরি, রং দিয়েই দেবীর সাজ তৈরি করতে হচ্ছে।” সরবারহকারীরা জানান, বনকাপাশি গ্রামে শুধুমাত্র পুজোর সময়েই ২৫ লরি শোলা লাগে। সেখানে অর্ধেক শোলাও তাঁরা সরবরাহ করে উঠতে পারেননি।

কলকাতার বাগবাজার থেকে মুদিয়ালি, সন্তোষপুর থেকে শ্যামবাজারের পুজোতেও এখানকার শিল্পীদের তৈরি হাল্কা সাজের গয়নার চাহিদা রয়েছে। ভিন রাজ্যের পুজো মণ্ডপেও বনকাপাশি থেকে শিল্পীরা গিয়ে দেবীকে সাজিয়ে আসেন। শোলা শিল্পীদের ধারণা, দিন দিন খাল-বিল, নয়ানজুলি কমায় শোলার উৎপাদন কমছে। পুকুরগুলিতেও মাছ চাষ হওয়ায় আর শোলা উৎপাদন সম্ভব নয়। শিল্পীদের অনুমান, যত দিন যাবে ততই শোলার সঙ্কট বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন