শেষ জবানবন্দিতে নিগ্রহের কথাই বলল দগ্ধ ছাত্রী

সন্ধ্যায় ফাঁকা বাড়িতে চার যুবক ঢুকে তার হাত ধরে টানাটানি করেছিল। সকালে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়। লজ্জায়-ভয়ে গায়ে আগুন দেয় সে শুক্রবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে এই জবানবন্দি দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় বছর বারোর মেয়েটির। তার ভিত্তিতেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৭:৩৪
Share:

সন্ধ্যায় ফাঁকা বাড়িতে চার যুবক ঢুকে তার হাত ধরে টানাটানি করেছিল। সকালে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়। লজ্জায়-ভয়ে গায়ে আগুন দেয় সে শুক্রবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে এই জবানবন্দি দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় বছর বারোর মেয়েটির। তার ভিত্তিতেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির নাম চৈতালি কৈবর্ত (১২)। বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার চাকটা গ্রামে আদর্শ সাধারণ বিদ্যাপীঠের পাশেই তাদের বাড়ি। ওই স্কুলেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত চৈতালি। তিন বোনের মধ্যে সে মেজো। মা বন্ধ্যাকরণের জন্য মুর্শিদাবাদের বড়ঞা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার অন্য দুই মেয়ে মায়ের সঙ্গেই ছিল। বাবা মোহন কৈবর্ত চাকটা-কাটোয়া রুটে বাসের কন্ডাক্টর। তিনি কাজে বেরিয়েছিলেন। সকালে আর্তনাদ শুনে পড়শিরাই ছুটে গিয়ে আগুন নিভিয়ে চৈতালিকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে জবানবন্দিতে (নথির নম্বর: ৭৫৬২) চৈতালি জানায়, ‘অমর মাঝি নামে একটি ছেলে কয়েক দিন ধরে আমাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছিল। রাস্তায় ও ফোনে নানা রকম বাজে বাজে কথা বলত। গত কাল (বৃহস্পতিবার) বাড়িতে কেউ ছিল না। সন্ধ্যার সময়ে চার জন বাড়ির ভিতরে ঢুকে আমার হাত ধরে টানাটানি করে। অমর ছাড়া বাকিদের আমি চিনি না। রাতে ফোন করে এ কথা কাউক বললে খুন করবে বলে অমর জানায়। সকালেও ফোন করে বলে, রাস্তায় বের হলে অত্যাচার করবে। ভয় পেয়ে ও লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়েছি।’

Advertisement

যিনি জবানবন্দি নিয়েছিলেন, সেই চিকিৎসক তাপস সরকার জানান, মেয়েটির গোটা শরীর এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে ডাক্তারি পরীক্ষা করা যায়নি। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস হাসপাতাল থেকে জবানবন্দির নথি সংগ্রহ করেন। মৃতার বাবার সঙ্গে কথাও বলেন। মোহনবাবুর অভিযোগ, “শুক্রবার ভোর ৫টা ২০ নাগাদ ফোন আসে। আমিই ধরেছিলাম। এক জন গালিগালাজ করে, রাস্তায় বেরোলে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেয়। ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে আবার ফোন আসে। তা ধরে আমার ভাইয়ের স্ত্রী। তাকে বলা হয়, ‘চৈতালিকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে দেব।’ কাজে বেরিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণের মধ্যেই দুঃসংবাদ আসে।”

অমর মাঝির বাড়ি চাকটা গ্রামেরই বাগদিপাড়ায়। সে পেশায় রাজমিস্ত্রি। এলাকায় তার বিরুদ্ধে নানা রকম কুকর্মের অভিযোগও রয়েছে। আগামী ৭ মার্চ পাশের কেচুনিয়া গ্রামে তার বিয়ে। বাড়ির সামনে মণ্ডপ বাঁধার কাজ চলছে। শ্লীলতাহানি, খুনের হুমকি ও আত্মহত্যায় বাধ্য করার অভিযোগে রাতে অমরকে গ্রেফতার করা হয়। তার মা দীপালি মাঝির প্রতিক্রিয়া, “ছেলে এ রকম জানলে কি আর বিয়ে ঠিক করতাম?” পুলিশ জানায়, অমরকে জেরা করে বাকিদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

ময়নাতদন্তের জন্য যখন মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মেয়ের মুখ দেখেই ভেঙে পড়েন মোহনবাবু। বললেন, “রোগে মৃত্যু হলে মানা যায়, কিন্তু এ ভাবে!” পড়শিদেরও এক কথা। প্রতিবেশী সুভাষ কৈবর্ত বলেন, “মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে! তবেই না এই বয়সে বাঁচার ইচ্ছে হারিয়েছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন