শাড়ির বাজারে এ বার ‘বাম্পার’

ছ’পাড়, মিসকলের পর তাঁতের শাড়ির বাজারে এ বার কালনার ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ের তাঁতিদের নতুন সংযোজন ‘বাম্পার’। তাঁতিদের দাবি, শাড়িটির প্রধান আকর্ষণ রঙের ব্যবহার। কথিত রয়েছে, প্রধানত মুঘল বাদশা জাহাঙ্গিরের আমল থেকেই ঢাকাই জামদানি শাড়ির কদর। ব্রিটিশ ভারতে বাংলার তাঁতকে মনে করা হত ম্যাঞ্চেস্টারের কাপড় শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৯
Share:

দোকানে ‘বাম্পার’ শাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ছ’পাড়, মিসকলের পর তাঁতের শাড়ির বাজারে এ বার কালনার ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ের তাঁতিদের নতুন সংযোজন ‘বাম্পার’। তাঁতিদের দাবি, শাড়িটির প্রধান আকর্ষণ রঙের ব্যবহার।

Advertisement

কথিত রয়েছে, প্রধানত মুঘল বাদশা জাহাঙ্গিরের আমল থেকেই ঢাকাই জামদানি শাড়ির কদর। ব্রিটিশ ভারতে বাংলার তাঁতকে মনে করা হত ম্যাঞ্চেস্টারের কাপড় শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রধানত, ১৯৪২ সাল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে একদল তাঁত শিল্পী কালনায় চলে আসেন। তখন থেকেই বাজারে কালনার শাড়ির সুনাম।

‘বাম্পার’ বাজারে আসতেই ওই শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে বলে জানা গেল। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ডিজাইনার অজিত বসাক জানান, সিল্ক ও পলেস্টরা সুতো দিয়ে তৈরি ‘বাম্পার’ শাড়িতে রয়েছে ডবল জ্যাকেটের নকশা। রয়েছে ঢাকাই জামদানি-র কাজও। দু’খানা বাম্পার শাড়ি কিনে বাড়ি ফেরার পথে অনিন্দিতা সেন বলেন, “শাড়িটির নকশায় দুই বাংলার ছোঁয়া রয়েছে। এবারের অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলী এই শাড়ি পরেই দেব।” ৮৪ কাউন্ট সুতোয় তৈরি শাড়িটির রঙের ব্যবহারও ক্রেতাদের মনে ধরেছে। শাড়িটির আঁচল ও কুচিতে ব্যবহার করা হয়েছে এক রকমের রং। শাড়ির বাকি অংশে ব্যবহার করা হয়েছে অন্য রং। রঙের ব্যবহারে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বৈপরিত্যকেই। কয়েকটি শাড়িতে আবার ব্যাবহার হয়েছে দু’য়ের বেশি রঙের সুতো। শাড়ির নকশায় রয়েছে অজস্র লতার কাজ। শাড়ির এই রকম নকশার কারণ সম্পর্কে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত তাঁতি সুরেশ বসাক বলেন “গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ক্রেতারা গোটা শাড়ি জুড়ে নকশা পছন্দ করছেন। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এই শাড়িতে রং ও নকশায় জোর দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

পাইকারি বাজারে এই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৫০০ টাকায়। দোকানে বিকোচ্ছে হাজার দুয়েক টাকায়। সমুদ্রগড় টাঙ্গাইল তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য কার্তিক ঘোষের দাবি, এই শাড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাঁতিরা জানিয়েছেন, বৈশাখ মাস থেকেই পুজোর মরসুম শুরু হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে কালনা থেকে প্রায় সাত গাড়ি করে তাঁত বোঝাই লরি পৌঁছে যায় কলকাতা, আসানসোল, হাওড়া, শিলিগুড়ির বাজারে। শাড়ি রফতানি হয়ে দেশ, বিদেশের বিভিন্ন বাজারেও।

শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাম্পারের পাশাপাশি তসর, পাওয়ার লুমের মতো পুরনো শাড়িগুলিও এই বছর ভাল বিক্রি হচ্ছে। তসরকে কম বয়েসীদের মধ্যেও আকর্ষণীয় করে তুলতে তাঁতিরা বাজারে এনেছেন বাইকালার তসর শাড়ি। পাইকারি বাজারে এর দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা। মধ্যবিত্তের পকেটের কথা মাথায় রেখে বাজারে রয়েছে ৪০০ টাকার শাড়িও। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হাতে তৈরি জামদানি এখন আর কালনায় পাওয়া যায় না। তবে ক্রেতাদের একটি অংশের কথা মাথায় রেখে নদিয়ার বেথুয়া থেকে জামদানি শাড়ি আনতে হচ্ছে বলে জানান কার্তিকবাবু। বাজারে জামদানির দাম ২০০০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকা। পাশাপাশি এক বাংলা ধারাবাহিকের অনুকরণে তৈরি ‘বাহা শাড়ি’ও বিক্রি হচ্ছে ভাল। এর দাম ৩০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা। তবে পুজোর সাজে সব শাড়িকে টেক্কা দিয়ে আপাতত বাম্পারেই ঝুঁকছেন মহিলারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন