সিআইডি সেজে প্রতারণা, ধৃত

ভরদুপুরে সিআইডি সেজে একের পর এক প্রশ্নে বাড়ির লোকেদের ঘাবড়ে দিয়েছিল চার যুবক। পরে সিজার লিস্ট পাঠানোর নাম করে নিয়ে গিয়েছিল নগদ টাকাপয়সা, গয়নাগাটিও। তারপরে ফোন করে জিনিসপত্র ফেরত নিতে লাখখানেক টাকা দিতে হবে বলে জানায় তারা। এতেই সন্দেহ হয় ওই বাড়ির বাসিন্দাদের। তারপরেই টাকা নিতে এসে পুলিশের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে ওই যুবকেরা। পুলিশ এক জনকে ধরেও ফেলে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৫
Share:

ধৃত প্রতারক। —নিজস্ব চিত্র

ভরদুপুরে সিআইডি সেজে একের পর এক প্রশ্নে বাড়ির লোকেদের ঘাবড়ে দিয়েছিল চার যুবক। পরে সিজার লিস্ট পাঠানোর নাম করে নিয়ে গিয়েছিল নগদ টাকাপয়সা, গয়নাগাটিও। তারপরে ফোন করে জিনিসপত্র ফেরত নিতে লাখখানেক টাকা দিতে হবে বলে জানায় তারা। এতেই সন্দেহ হয় ওই বাড়ির বাসিন্দাদের। তারপরেই টাকা নিতে এসে পুলিশের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে ওই যুবকেরা। পুলিশ এক জনকে ধরেও ফেলে।

Advertisement

কালনা ২ ব্লকের শাসপুর এলাকার রামকৃষ্ণপল্লীর ওই ঘটনায় উত্তজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুনীল মল্লিকের ছোট ছেলে অটল মল্লিকের বিয়ের দিন ঠিক হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। তার আগের দিন, ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মল্লিকবাবুদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি। গাড়ি থেকে রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় নেমে দ্রুত বাড়িতে ঢুকে পড়ে চার যুবক। তাদেরই একজন আবার ইংরেজি মোশানো বাংলায় কথা বলতে বলতে পকেট থেকে কার্ড বের করে নিজেকে ‘টিম লিডার’ দাবি করে বলে, ‘‘ভবানী ভবনের সিআইডি অফিস থেকে আসছি আমরা।’’ এরপরেই ওই যুবক সুনীলবাবুকে পরপর প্রশ্ন করতে থাকেন ওড়িশার ব্যবসা কেমন চলছে? কালনা স্টেশন সংলগ্ন হোটেল কেমন করে চলছে? মুম্বইতে ছেলের সিটি গোল্ডের ব্যবসারই বা কী হাল? ইত্যাদি। পরপর প্রশ্নে থতমত খেয়ে যান মল্লিক পরিবারের সদস্যরা। কিছুটা সামলে উঠে পরিবারের সদস্যরা জানান, ওড়িশা ও কালনার ব্যবসা এখন আর নেই। ছেলে অটলবাবু মুম্বইতে এক মালিকের কাছে কাজ করে। যদিও সেই সব কথায় পাত্তা না দিয়ে যুবকেরা জানায়, খবর আছে বাড়িতে হিসাব বহির্ভূত জিনিসপত্র রয়েছে। তাই বাড়ি সার্চ করা হবে। আলমারি খুলে দিতে বলে তারা। সুনীলবাবুর স্ত্রী ইতি মল্লিকের আলমারি খুলে দেওয়া হলে বেশ কিছু নথি, এটিএম কার্ড, নগদ টাকা ও গয়না নিজেদের ‘হেফাজতে’ নেয়। চাবি না থাকায় মল্লিকবাবুর বড় বৌমার আলমারি ভাঙচুর করে লুঠ করা হয় সোনার গয়না ও নগদ টাকা। মল্লিকবাবুর মেয়ের কাঠের বাক্সে থাকা বেশ কিছু গয়নাও লুঠ করা হয়। মোট ৯ ভরি গয়না ও নগদ ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৬০০ টাকা নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে ওই যুবকেরা বলে যায় তারা বাড়ি থেকে যা যা নিয়ে যাচ্ছে তার ‘সিজার লিস্ট’ করে দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে। মল্লিক পরিবারের দাবি, সুনীলবাবু ও অটলবাবুর ফোন নম্বরও জেনে নেয় ওই যুবকেরা। যাওয়ার আগে প্রায় হুমকির ঢঙে তারা বলে, ‘লাখ দু’য়েক টাকা দিলে তবেই মামলা করা হবে না।’ সুনীলবাবু তাদের জানান, বিয়ে মিটলে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করবো।

দলটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই তাদের আচরণ নিয়ে সন্দেহ হয় সুনীলবাবুর। বিষয়টি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে জানালে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। ৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশকে ঘটনার কথা জানান মল্লিক পরিবারের সদস্যরা। এ দিকে বিয়ে মেটার কিছুদিন পরেই বাড়িতে ফোন আসে। কেউ একজন দাবি করে, “আমি সিআইডি অফিসার।” টাকা নিয়ে তারা কলকাতায় দেখা করার কথাও বলে ওই ব্যক্তি। ফোনটি রেকর্ড করে মল্লিকবাড়ির সদস্যরা কালনা পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরপর কালনা থানার ওসি দীপঙ্কর সরকারের পরামর্শে সুনীলবাবুর মেয়ে বেবিদেবী মোবাইলে জানান, তাঁর বাবা টাকা দিতে চান। তবে ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর পক্ষে কলকাতায় যাওয়া সম্ভব নয়। বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন বেবিদেবী। পরে ওই ‘সিআইডি’ অফিসারেরা প্রস্তাব দেয় ব্যাণ্ডেল স্টেশনে এসে টাকা দিতে। কিন্তু বেবিদেবী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কালনা স্টেশনে টাকা দেওয়া হবে।

Advertisement

শুরু হয় ‘অপারেশন’। ওই দিন সন্ধ্যা নামার আগেই ষ্টেশন চত্বরে হাজির হন বেবিদেবী। সঙ্গে ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। কাছাকাছিই ছিলেন বাড়ির লোকজনেরাও। সন্ধ্যা ৭টা বাজতেই বেবিদেবীর মোবাইলে একজন জানায়, টাকা নিতে তারা এসে পড়েছে। তবে টাকা হস্তান্তর স্টেশন সংলগ্ন একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে। মোবাইল কানে বেবিদেবী পাম্পের দিকে খানিকটা এগোতেই দেখা যায় অন্ধকার রাস্তায় এক যুবক মোবাইলে কথা বলছেন। তাকে মল্লিকবাড়ির লোকজন দ্রুত ধরে ফেলে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

তবে গোলমালের সুযোগে চম্পট দেয় বাকিরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বছর পঁচিশের যুবক সুরজ আদিত্যের বাড়ি নদিয়ার নবদ্বীপ এলাকায়। রাতে নবদ্বীপের কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হলেও বাকিদের এখনও খোঁজ মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন