ঋণের ভারে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)-এর অস্ত্বিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। সুদ না মেটানোয় সংস্থার চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ’ করা হয়েছে সম্প্রতি। অবিলম্বে এর উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানিয়ে শনিবার ডিপিএল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তম ইউনিট গড়ে তোলার সময়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন লিমিটেড’ (পিএফসিএল)-এর কাছে ১৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সেই বাবদ মাসে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা সুদ গুণতে হয়। পরে অষ্টম ইউনিটটি গড়ার সময়ে আরও ২১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয় একই সংস্থার কাছ থেকে। সে জন্য মাসে ঋণ বাবদ দিতে হয় প্রায় ২১ কোটি টাকা। প্রতি তিন মাসে সুদ মেটাতে হয়। সেই হিসেবে প্রতি তিন মাস ছাড়া মোট প্রায় ১১৪ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। শেষ দু’বার সুদ জমা করেনি ডিপিএল। অর্থাৎ, বাকি পড়ে গিয়েছে প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। বারবার চিঠি দিয়েও সাড়া না মেলায় শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার ডিপিএলের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা বন্ধ করে দেয় পিএফসিএল। এর ফলে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে এখন থেকে জমা পড়া অর্থ চলে যাবে সরাসরি পিএফসিএলের ঘরে।
সিপিএমের দাবি, দ্রুত সমস্যা না মিটলে সামনের মাসে কর্মীদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। তাছাড়া রোজকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ, শহরের বিস্তীর্ণ অংশে জল সরবরাহের খরচ মেটানোর জন্যও টাকা প্রয়োজন। ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে দৈনিক জমা-খরচ চালানো হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, আপাতত পিএফসিএল-কে ৭৩ কোটি টাকা দিয়ে রফা করার চেষ্টা চলছে। আগামী বুধবারের মধ্যে তা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতর এবং ডিপিএলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল তার আগে দিল্লি গিয়ে পিএফসিএল-এর সঙ্গে আলোচনায় বসবে তার আগেই। তবে এ ছাড়াও এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছ থেকে মোটা টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘স্টেট ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড’-এর কাছেও ২৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সুদ মেটানোর টাকা জোগাড় করতে হিমসিম ডিপিএল।
সিপিএমের দুর্গাপুর পূর্ব ২ জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘অবস্থার উন্নতি না হলে সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। দুর্গাপুর শহরে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার উপরে রীতিমতো প্রভাব পড়বে।’’ সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘নতুন লগ্নি নেই। রাজ্য সরকারের নিজস্ব সংস্থার ভবিষ্যৎও ঘোর অনিশ্চতার মুখে।’’ আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের হেলদোল না থাকার জন্যই সংস্থার এমন করুণ দশা।’’ আইএনটিটিইউসি নেতা আলোময় ঘড়ুই অবশ্য বলেন, ‘‘সংস্থার ঘাড়ে ঋণের বোঝার অনেকটাই চেপেছে ওই আমলে। তবে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। সংস্থাকে বাঁচাতে হবে।’’