সিন্ডিকেটে জড়িত দলনেতা, অভিযোগ মুকুলকে

মাসখানেক আগে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, “সিন্ডিকেটের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়। এ সব মিথ্যা প্রচার।” কিন্তু এ বার দলের এক নেতা সিন্ডিকেটে জড়িত বলে মুকুলবাবুর কাছেই অভিযোগের চিঠি পাঠালেন দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৭
Share:

মাসখানেক আগে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, “সিন্ডিকেটের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়। এ সব মিথ্যা প্রচার।” কিন্তু এ বার দলের এক নেতা সিন্ডিকেটে জড়িত বলে মুকুলবাবুর কাছেই অভিযোগের চিঠি পাঠালেন দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা মালিকেরা ওই সিন্ডিকেটের দাপটে অতিষ্ঠ বলে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান নিখিলবাবু অভিযোগ পাঠিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ কমিশনারের কাছেও। যে নেতার বিরুদ্ধে নিখিলবাবুর এই অভিযোগ, দুর্গাপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি সেই খোকন রুইদাস অবশ্য সিন্ডিকেট চালানোর কথা মানেননি।

Advertisement

এমনিতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর একাধিক সদস্যের অভিযোগ, শিল্পাঞ্চলে সিন্ডিকেটের রমরমা ইদানীং অনেক বেড়েছে। সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি সমীর বসুর দাবি, সিন্ডিকেটের উপদ্রবে সম্প্রসারণ-প্রকল্প বন্ধ রেখেছেন অনেকে, শিল্পক্ষেত্রে যা যথেষ্ট উদ্বেগের। এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় এডিডিএ-র শিল্পতালুকে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার মালিকদের সমস্যায় ফেলছেন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের নেতা খোকন রুইদাস।

নিখিলবাবুর কথায়, “সগড়ভাঙার ওই কারখানাগুলির মালিকেরা লিখিত অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছেন। মৌখিক ভাবে তাঁরা পরিস্থিতি আমাকে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে দলের নেতা মুকুল রায় ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।” শুধু সিন্ডিকেট নয়, খোকনবাবুর ‘তোলাবাজি’র জেরে ওই কারখানা মালিকেরা এবং মুচিপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী জেরবার বলেও দাবি নিখিলবাবুর। দল বা পুলিশের কাছে পাঠানো চিঠিতে অবশ্য বিধায়ক অভিযুক্ত খোকনবাবুর রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করেননি। তাঁর যুক্তি, “অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয়টা বড় নয়। সিন্ডিকেটের দাদাগিরিটা বন্ধ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।”

Advertisement

ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, তৃণমূলের কারও সিন্ডিকেটে জড়ানো চলবে না। কিন্তু রাজ্যবাসী দেখেছেন, কলকাতার নিউটাউনে মাস কয়েক আগেই সিন্ডিকেট নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। সে সময় মুকুল রায় দলের কেউ সিন্ডিকেটে জড়িত বলে মানেননি। জুন মাসে দমদমের মধুগড়ে দুই সিন্ডিকেটের মধ্যে গোলমালের জেরে প্রাণ যায় তৃণমূল সমর্থক সোমনাথ সাধুখাঁর। তখনও বক্তব্যে অনড় ছিলেন মুকুল। তবে সেই সময় দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসি কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দলের কোনও পুরনো কর্মী সিন্ডিকেট নিয়ে মারামারি করছেন বলে বিশ্বাস করি না। দল ক্ষমতায় আসার পরে অনেকে নতুন এসেছে। তারাই এ সব করছে।”

তৃণমূল নেতা তথা ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-সহ আইএনটিটিইউসি-র একাধিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি খোকন রুইদাসের গলাতেও এ দিন একই সুর। তাঁর দাবি, “সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া লোকজনদের নিয়ে দলের নেতাদের একাংশ সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন।” তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে স্থানীয় যুবকদের রোজগারের সুযোগ করে দিতে একটি নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ‘যৌথ-ব্যবস্থা’ করেছিলেন। কিন্তু সেই যুবকদের সঙ্গে এখন তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর কথায়, “ওই যুবকেরা বাজারদরে মাল দেয়। তাদের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ নেই। এমনকী, রোজগারের অংশ দিয়ে তারা ছোটখাটো সামাজিক কাজকর্মও করে থাকে।” খোকনবাবুর সংযোজন: তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যাঁরা প্রকৃতই জড়িত, তাঁদের নিয়ে কেউ টুঁ শব্দ করছে না।

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, “নিখিলবাবুর চিঠি হাতে পেলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বহু বার চেষ্টা করেও রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি মুকুল রায়ের সঙ্গে। তবে জেলা তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “নিখিলবাবুর সঙ্গে কথা বলে দেখি, কী হচ্ছে ওখানে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন