সুপারের সই জাল করে প্রতারণার চেষ্টা

চেক জাল করে হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠল কালনায়। তবে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চেকটি ভাঙাতে দেওয়া হয়, সেই ব্যাঙ্কের তত্‌পরতায় শেষ পর্যন্ত টাকা খোওয়া যায়নি। ঘটনায় উদ্বিগ্ন কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার সপ্তাহখানেক আগে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। তবে এখনও কাউকে ধরেনি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৫
Share:

চেক জাল করে হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠল কালনায়। তবে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চেকটি ভাঙাতে দেওয়া হয়, সেই ব্যাঙ্কের তত্‌পরতায় শেষ পর্যন্ত টাকা খোওয়া যায়নি। ঘটনায় উদ্বিগ্ন কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার সপ্তাহখানেক আগে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। তবে এখনও কাউকে ধরেনি পুলিশ।

Advertisement

কালনা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি থেকেই হাসপাতালের সমস্ত টাকা লেনদেন হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাইকে ফোন করে জানান, হাসপাতালের তরফে এমন দুটি চেক এসেছে যাতে টাকার পরিমাণ ১৭ লক্ষেরও বেশি। তার মধ্যে ৮ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬২৭ টাকার একটি চেক তারা ছেড়েও দিয়েছেন। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কথা শুনে সুপার আকাশ থেকে পড়েন। সাফ জানিয়ে দেন, হাসপাতাল কোনও বড় অঙ্কের চেক দেয়নি। এরপরেই হৈ চৈ শুরু হয়ে যায় ওই ব্যাঙ্কে। তবে সে দিনই যেহতু হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা হয়েছিল তাই ব্যাঙ্ক টাকা ফেরতও করে দেয়। অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্যে লিখেও দেওয়া হয় জালিয়াতির কথা।

তবে প্রতারণার এমন ধরন মহকুমায় নতুন নয় বলে পুলিশের দাবি। বছর খানেক আগে বিনায়ক সামন্ত নামে মন্তেশ্বরের এক ব্যবসায়ির কাছ থেকেও একটি একশো টাকার চেক নিয়ে তারপর সেই চেক ভাঙিয়ে মোটা টাকা তুলেছিল প্রতারকেরা। বিনায়কবাবু মন্তেশ্বর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। যদিও এখনও সেই ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতারও করা হয়নি কাউকে।

Advertisement

এ দিন সমস্যার তত্‌ক্ষণাত্‌ সমাধান হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে চেকদুটি চেয়ে পাঠান। দেখা যায়, চেকদুটিতে সুপার এবং কালনার এসিএমওএইচ শেখ মোশারফ আলির সই ও স্ট্যাম্প নিখুঁত ভাবে নকল করা হয়েছে। হাসপাতাল জানতে পারে, চেকদুটির একটি ১০ এবং অন্যটি ১১ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হয় ওই ব্যাঙ্কের ভুবনেশ্বর শাখাতে। ১০ ডিসেম্বর জমা পড়া চেকটিতে এসএম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থার নাম ছিল। আর অন্যটি রজিত দেবেন্দর পুরি নামে এক ব্যক্তির নামে লেখা ছিল। হাসপাতালের দাবি, চেকদুটির নম্বর খতিয়ে দেখতেই বোঝা যায়, ওই চেকগুলি তারা ১৮ অক্টোবর জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে দুই মহিলার নামে ইস্যু করেছিলেন। নথি দেখে বের করা হয়, একটি কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের কুত্তিরডাঙা এলাকার মহামায়া রাজবংশী নামে এক মহিলার নামে ও অন্যটি পূর্ণিমা মাঝি নামে কাটোয়ার পোস্টগ্রামের এক বধূর নামে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিপিএল, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের মহিলাদের প্রসবের পরে যে দিন হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় সে দিন জননী সুরক্ষা যোজনার এক হাজার টাকার চেকও তাদের হাতে দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই চেকের নম্বরে সামান্য বদল ঘটিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করে প্রতারকেরা। আসল নম্বর ছিল- ০৫২৩৭০০০০৩৪। নকল চেকে যা করে দেওয়া হয় ০৫২৩৭০০০০৪। পাশাপাশি, আসল চেকের মাঝামাঝি লেখা ছিল ‘ভ্যালিড আপ টু ১০ ল্যকস’। সেটি বদলে আপটু ৫০ ল্যাকস করে দেওয়া হয় বলেও হাসপাতালের অভিযোগ।

বুধবার মহকুমা হাসপাতালের সুপার জানান, ব্যাঙ্ক যদি শেষ মুহূর্তে ফোন না করত তাহলে আর সর্বনাশ আটকানো যেত না। সই জালের বিষয়টি নিয়েও চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তাঁরা। সুপারের দাবি, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। জানানো হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসককেও। সুপারের দাবি, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ১৮ অক্টোবর যে দু’জন মহিলাকে জননী সুরক্ষা যোজনার চেক দেওয়া হয়েছিল তারা সেই চেক ভাঙাননি। তাহলে কি ওই দুটি চেক দিয়েই প্রতারণার চেষ্টা হয়েছে? সুপার বলেন, “আমাদেরও খটকা রয়েছে। পুলিশ নিশ্চয় খতিয়ে দেখবে সবটা।”

বুধবার সন্ধ্যায় কালনা থানার এক আধিকারিক বলেন, “যে ব্যাঙ্কে চেক দুটি জমা পড়েছিল সেই ব্যাঙ্ক এবং স্থানীয় থানার কাছে চিঠি পাঠিয়ে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। দোষিদের খুঁজে গ্রেফতারেরও চেষ্টা চলছে।” তাছাড়া যে চেক নম্বর দুটি নিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছে তা যে দুই মহিলার নামে আগেই ইস্যু করা হয়েছিল সে ব্যাপারেও হাসপাতাল সুপারকে আলাদা অভিযোগ করতে বলা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন