স্পর্শকাতর বুথ কম ‘সন্ত্রস্ত’ কেতুগ্রামে, বিস্মিত বিরোধীরা

রাজ্যের ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লক। অথচ লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, সোমবার প্রকাশিত বুথের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, কাটোয়া মহকুমার মধ্যে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সবচেয়ে কম। এমনকী বুথের ভিতর ভিডিওগ্রাফি হবে মাত্র দুটি বুথে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আমরাও বুঝতে পারছি না, কেন এ রকম হল?

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

রাজ্যের ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লক। অথচ লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, সোমবার প্রকাশিত বুথের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, কাটোয়া মহকুমার মধ্যে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সবচেয়ে কম। এমনকী বুথের ভিতর ভিডিওগ্রাফি হবে মাত্র দুটি বুথে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আমরাও বুঝতে পারছি না, কেন এ রকম হল?

Advertisement

এর আগে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল প্রকাশ্যে সমালোচনা বা কটাক্ষ করলেও কেতুগ্রামের ক্ষেত্রে এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সোমবার বিকালে নির্বাচন কমিশন-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাক্স পাঠিয়ে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে সিপিএম। যদিও প্রশাসনের বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হয়েছে, বুথের ‘ক্যাটাগরি’ করার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও হাত নেই। পুরোটাই নির্বাচন কমিশন ঠিক করে তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে।

এ বঙ্গে পরিবর্তনের আগে বা পরে, কেতুগ্রাম ১ ব্লক সবসময় ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকা বলেই পরিচিত। বিগত বাম সরকারের আমলে কংগ্রেস বা তৃণমূল সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলত। পঞ্চায়েত ভোটেও প্রার্থী দিতে না পারা কিংবা গণনা কেন্দ্র থেকে পুলিশের সাহায্যে বিরোধীদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠত সিপিএমের বিরুদ্ধে।

Advertisement

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও কেতুগ্রামের ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই কেতুগ্রাম ১ ব্লকের সদর কান্দরার ‘দখল’ নেয় তৃণমূল। সিপিএমের দুটি লোকাল কমিটির দফতর-সহ একের পর এক দলীয় কার্যালয়ে তালা পড়তে থাকে। ঘরছাড়া হয় প্রচুর সিপিএম সমর্থক। বিধানসভা ভোটেও বেশ কয়েকটা গ্রামে সিপিএমের পা পড়েনি। ওই ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের ১১৭টি আসনের কোথাও সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি। পঞ্চায়েত সমিতিতেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করে তৃণমূল। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের জেলা পরিষদের দুটি আসনে তৃণমূলের মোট ব্যবধান ছিল প্রায় ৪৪ হাজার।

এ বার লোকসভা ভোটে নির্বাচন কমিশন ময়দানে নামায় তিন বছর পর কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া এলাকায় প্রচার করে সিপিএম। পাঁচ বছর পরে কান্দরায় কেতুগ্রাম ১ দক্ষিণ লোকাল কমিটির দলীয় দফতরে তালা খোলে। তবে কয়েকদিন পরে সেই দফতর ফের বন্ধ করে দেয় সিপিএম। এরপরে ‘নির্বিঘ্নে’ কান্দরায় প্রচার করেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। কেতু্গ্রাম ১ ব্লকের কার্যত কোথাও বিরোধী প্রার্থীদের কোনও দেওয়াল লিখন বা বাড়ি বাড়ি ভোট চেয়ে প্রচার নেই। এ রকম একটি জায়গায় ‘এত কম’ বুথ স্পর্শকাতর কীভাবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “বিগত সময়ের নির্বাচন ও কার্যকলাপ দেখলে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের সব বুথই স্পর্শকাতর হওয়া উচিত। কী উদ্দেশে নির্বাচন কমিশন এ রকম সিদ্ধান্ত নিল বুঝতে পারছি না।” সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা নির্বাচন কমিশন-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছেন, ১৪৬ টা বুথের মধ্যে ৯৯টা বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা দরকার।

কেতুগ্রাম বিধানসভার কংগ্রেসের নেতা দীপক মজুমদার বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে ভোটদানের ব্যবস্থা করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন সে জন্য নির্বাচন কমিশনের আরও সচেষ্ট হওয়ার প্রয়োজন ছিল।” বিজেপির বর্ধমান জেলার নেতা অনিল দত্ত মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই ব্লকে ভোটের নামে প্রহসন হবে। তৃণমূল ভয় দেখিয়ে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত যেতে দেবে না। তবে তৃণমূলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কেতুগ্রাম ১ ব্লকের মানুষ শান্তিতে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে রয়েছেন।”

এ ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যখা, ব্লক দফতর ও পুলিশ বারবার বিভিন্ন বুথ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠায়। গত এক বছর ধরে এ রকম রিপোর্ট বারবার তৈরি করতে হয় বিডিও ও থানার অফিসারদের। ওই রিপোর্টগুলি থেকে নির্বাচন কমিশন দেখে, রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে কি না, গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে কি না, কিংবা যে সব বুথে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে একজন প্রার্থীই ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে কিনা। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নানা স্তর থেকে পৃথক ভাবে ওই রিপোর্ট যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বুথের ‘ক্যাটাগরি’ ঠিক করে। সেখানে আমাদের কোনও হাত থাকে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন