মুখ্যমন্ত্রীর সেই শিল্প-বৈঠক। —ফাইল চিত্র।
সিন্ডিকেটের দাপট থেকে মারধর-হেনস্থাশাসকদলের কর্মীদের দাপটে নানা সংস্থায় অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ উঠেছে বারবার। কিন্তু তা বন্ধ করতে সরকারের শীর্ষ স্তরকে কখনও কড়া বার্তা দিতে দেখা যায়নি। উল্টে, বৃহস্পতিবার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে জমি মাফিয়ারা দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করায় এক শিল্পোদ্যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলে দিয়েছেন, “আপনার জমি আপনি রক্ষা করবেন না তো কি আমি রক্ষা করব!” তাঁর এই মন্তব্য প্রকারান্তরে দুষ্কৃতীদেরই সাহস জোগাবে বলে আশঙ্কা করছেন আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বহু শিল্পোদ্যোগীই।
শিল্প-বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনের পরে সে দিন আসানসোলের পোলো মাঠে শিল্পপতিদের সঙ্গে চা চক্রে যোগ দিয়েছিলেন মমতা। সেখানেই বরাকরের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন, তিনি রক্ষাকর্তা হতে পারবেন না। উল্টে তিনি ওই ব্যবসায়ীকে প্রশ্ন করেন, “জমি ফাঁকা ফেলে রেখেছেন কেন?” শুক্রবার বরাকর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি দীপক দুধানিয়া বলেন, “নিজের সম্পত্তি নিজেকে রক্ষা করার যে তত্ত্ব তিনি দিলেন তাতে দুষ্কৃতীরা একপ্রকার উৎসাহই পাবে।” তাঁর আরও দাবি, “তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) উদ্যোগপতিদের কোনও শুভবার্তা দিতে পারেননি। যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই রইলাম।”
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তাঁর মনঃপুত হয়নি বলে জানিয়েছেন আসানসোল ইন্ডাস্ট্রিয়াল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি অধীর গুপ্তও। তিনি বলেন, “এখানকার শিল্পতালুকগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি দরকার। সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। নির্বিঘ্নে শিল্প-সংস্থা চালানোর বিষয়েও ভরসা জোগাতে পারলেন বলে মনে হচ্ছে না।”
গত বছর এই শিল্পাঞ্চল জুড়ে একের পর এক সংস্থা হামলা-হুমকির ঘটনায় জেরবার হয়েছে। জামুড়িয়ায় বেসরকারি কারখানাকে হুমকি, রানিগঞ্জে খনির অফিসারকে হেনস্থা, অন্ডালে ঠিকাদারকে খুন, দুর্গাপুরের কারখানায় ঢুকে তাণ্ডব, ফরিদপুরে নির্মীয়মাণ কাগজকলে সিন্ডিকেটের উপদ্রব নানা অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসকদলের লোকজনের। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি বলে বণিকমহলের দাবি। নভেম্বরে আসানসোল ও দুর্গাপুরে সভা করতে এসেও মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কোনও বার্তা দেননি। উল্টে, তাঁর কর্মিসভায় হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে সিন্ডিকেট চালানোয় অভিযুক্ত বহিষ্কৃত নেতাকে।
এর পরে বৃহস্পতিবারও শিল্পপতিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় পরিস্থিতি পাল্টানোর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী কোনও আশ্বাস না দেওয়ায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “উদ্যোগপতিদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে আর মুখ্যমন্ত্রী নিজের সম্পত্তি নিজেকে রক্ষা করার তত্ত্ব দিচ্ছেন। আসলে তৃণমূলের কর্মীরাই তো তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাই তিনি অন্য কথা বলবেন কোন মুখে।” বিজেপির জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যত দিন যাচ্ছে, তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাই দলনেত্রীকে এখন আশ্রিত দুষ্কৃতীদের তোয়াজ করতে হচ্ছে। সেই মানসিকতারই প্রতিফলন ওই শিল্প-বৈঠকে দেখা গিয়েছে।” জেলা কংগ্রেস নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “ভোটে উতরোতে দুষ্কৃতীরাই এখন ওদের ভরসা। তাই তাদের চটানো ওদের পক্ষে সম্ভব নয়।”