সন্ধ্যা হলেই আঁধারে ডোবে রামনগরডাঙা

আশপাশের সব গ্রামই সন্ধ্যে হলে ঝলমলিয়ে ওঠে আলোয়। রাস্তা, ঘর-বাড়ি সবেই আলো জ্বলে। গরমে সারাদিনের খাটুনির পরে পাখার নীচে ঘুমোতেও পারেন বাসিন্দারা। অথচ ওই এলাকারই আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির ভাল্কি পঞ্চায়েতের রামনগরডাঙা গ্রামে আঁধার ঘোচেনি এখনও। পাশের গ্রামের সাবস্টেশনের আলো দেখতে দেখতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, বারবার নানা জায়গায় আবেদন করার পরেও কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৩
Share:

আশপাশের সব গ্রামই সন্ধ্যে হলে ঝলমলিয়ে ওঠে আলোয়। রাস্তা, ঘর-বাড়ি সবেই আলো জ্বলে। গরমে সারাদিনের খাটুনির পরে পাখার নীচে ঘুমোতেও পারেন বাসিন্দারা। অথচ ওই এলাকারই আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির ভাল্কি পঞ্চায়েতের রামনগরডাঙা গ্রামে আঁধার ঘোচেনি এখনও। পাশের গ্রামের সাবস্টেশনের আলো দেখতে দেখতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, বারবার নানা জায়গায় আবেদন করার পরেও কোনও লাভ হয়নি। তবে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সকলেরই মত, খুব দ্রুত ওই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

Advertisement

রামনগরডাঙায় প্রায় ৬০ ঘর আদিবাসী পরিবারের বাস। গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিনমজুরি করেন। শতাব্দী প্রাচীন ওই গ্রামে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। গ্রামের মিনু বাস্কির অভিযোগ, আশপাশের প্রায় সমস্ত গ্রামেই বিদ্যুৎ এসেছে। তাঁদের গ্রাম যে সংসদের অন্তর্গত সেই সাহেবডাঙাতেও বিদ্যুৎ আছে। অথচ তাঁদের গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। মিনুবাবু বলেন, “আমাদের কাছেই মানকর সাবস্টেশন। সেই আলো আমাদের গ্রামে এসে পড়ে। অথচ আমরা অন্ধকারেই বসবাস করে আসছি।” মিনুবাবু অভিযোগ করেন, বহুবার এ বিষয়ে বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ফল মেলেনি। গ্রামবাসীরা আরও জানান, এলাকার জামবুনি, বুড়িবাঁধ, মোলডাঙার মতো আদিবাসী গ্রামগুলিতে বিদ্যুতের তার লাগানো হয়ে গিয়েছে। অথচ তাঁদের গ্রামে এখনও খুঁটিও বসেনি।

গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। তাদেরই কয়েকজন সুনীল টুডু, গণেশ টুডু, রাম বাস্কিরা জানায়, রাতে পড়তে হলে ভরসা একমাত্র হ্যারিকেন। তাও তেলের অভাবে অনেকসময় তাও জোটে না। সুনীলরা বলে, “সন্ধ্যে নামলেই আমাদের সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। কেরোসিন তেলের অভাবে পড়াশোনাও করতে পারিনা ঠিক মতো।” ওই গ্রামেরই লখু হেমব্রম জানান, রেশনে যে পরিমান তেল পাওয়া যায় তাতে চাহিদা মেটে না। ফলে বাজার থেকে বেশি দামে কেরোসিন তেল কিনতে হয়। তাঁর আরও অভিযোগ, আগে তাঁদের গ্রামের আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হলেও কোনও তার লাগানো ছিল না। কিন্তু এখন তাঁদের গ্রাম ছাড়া বাকি সবগুলিতেই তার লাগানো হয়েছে। ট্রান্সফর্মারও লাগানো হয়ে গিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যুৎও চলে আসবে। লখুবাবু বলেন, “একে একে সব গ্রামেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। পড়ে আছে আমাদের গ্রামটাই।”

Advertisement

এ প্রসঙ্গে ভাল্কি পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুমার বাউড়ি জানান, রামনগরডাঙায় বিদ্যুৎ আসার সব ব্যবস্থাই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন এখনও সংযোগ দেওয়া হয়নি তা তিনি জানেন না। আউশগ্রাম ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলিরও আশ্বাস, খুব দ্রুত বিদ্যুৎ চলে আসবে। আউশগ্রাম ২ এর বিডিও দীপ্তিময় দাস জানান, বিদ্যুৎ দফতর থেকে তাঁর সহযোগিতা দরকার হলে তিনি সবরকমের সাহায্য করবেন। বর্ধমান আরই প্রজেক্টের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়র পিকে মণ্ডল জানান, বিষয়টি না দেখে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে তাঁর আশ্বাস, “যদি স্কিমটি তাঁদের দফতরে জমা পড়ে এবং ছাড়পত্র পেয়ে থাকে তাহলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন