হাত কালো কেন, অবাক পিসি

প্রথমে নজরে এসেছিল পিসি কল্পনা মণ্ডলের। ডান হাতের তালু এতটা কালো হয়ে গিয়েছে কেন? নিউমোনিয়ায় ভুগলে এমনটা আবার হয় নাকি! প্রশ্ন নিয়ে ছুটেছিলেন কর্তব্যরত নার্সের কাছে। ‘মলম লাগান।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২৭
Share:

প্রথমে নজরে এসেছিল পিসি কল্পনা মণ্ডলের। ডান হাতের তালু এতটা কালো হয়ে গিয়েছে কেন? নিউমোনিয়ায় ভুগলে এমনটা আবার হয় নাকি!

Advertisement

প্রশ্ন নিয়ে ছুটেছিলেন কর্তব্যরত নার্সের কাছে। ‘মলম লাগান। ঠিক হয়ে যাবে’— নির্লিপ্ত উত্তর দিয়েছিলেন নার্স। আশঙ্কাটা তবুও কাটেনি। কল্পনাদেবী মাত্র আড়াই মাসের ছোট্ট অঙ্কুরের ফুলহাতা টি-শার্টের হাতা গোটাতেই আঁতকে উঠেছিলেন, দু’দিন আগে রক্ত নেওয়ার জন্যে বাঁধা টুর্নিকেট তখনও খোলা হয়নি! কালো হয়ে গিয়েছে গোটা হাতটাই।

যে ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের সুপার-সহ শিশু বিভাগে অঙ্কুরের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মোট ছ’জন ডাক্তার-নার্সকে শো-কজ করার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার রানিগঞ্জের বল্লভপুরের মাহিষ্যপাড়ায় (হরিবোল সমিতি) গিয়ে দেখা গেল সেই নিয়েই আলোচনা। এখানেই বাড়ি অঙ্কুরের। বাবা জয়ন্ত সীট। তিনি পেশায় অস্থায়ী বাসকর্মী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। জয়ন্তবাবুর এক দিদি রেখা সিংহ জানালেন, ২৬ জানুয়ারি প্রথমে রানিগঞ্জে এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অঙ্কুরকে। সেখান থেকে আসানসোল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেলে নার্স ডান হাতে ওই টুর্নিকেট বেঁধে দেয়। শিরা না মেলায় পরে পা থেকে রক্ত নেওয়া হয়। ফুলহাতা টি-শার্ট পরানো ছিল অঙ্কুরকে।

পা থেকে রক্ত নেওয়ার পরে টুর্নিকেটটি যে হাতে বাঁধা থেকে গিয়েছে, কেউ খেয়াল করেনি। ইতিমধ্যে অঙ্কুর বহুবার কেঁদেছে। কিন্তু, নার্সেরা আমল দেননি বলে অভিযোগ। ‘‘চিকিৎসক-নার্সদের অপদার্থতার জন্যেই শিশুকে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে হল’’— ক্ষোভ অঙ্কুরের পড়শিদের। তাঁরা উপযুক্ত শাস্তির দাবি তুলেছেন।

২৮ জানুয়ারি জয়ন্তবাবুর দিদি কল্পনাদেবী হাসপাতালে অঙ্কুরকে দেখতে যান। হাতের চেটো কালো দেখে তিনি নার্সদের জানান। ছুটে আসেন অঙ্কুরের মা পিউদেবীও। চেঁচামেচি করলে নার্সেরা তড়িঘড়ি সেটি খুলে দেয়। প্রতিবাদ করলে নার্সেরা বের করে দেওয়ার হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ।

পরে জয়ন্তবাবুর এক জামাইবাবু সুশান্ত মণ্ডল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গাফিলতির অভিযোগ করেন। এরপরেই অঙ্কুরকে স্থানান্তর করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই সোমবার যেখানে টুর্নিকেট বাঁধা হয়েছিল তার নীচ থেকে হাত বাদ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে কাটা হাতের অংশ বিশেষের পরীক্ষা করে চিকিৎসার ক্রুটি খুঁজে বের করার আর্জি জানিয়েছেন অঙ্কুরের বাবা জয়ন্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন