এখন পারাপার হেঁটেই। জল বাড়লে সমস্যাও বাড়ে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
প্রতি বছরই বর্ষার আগে অজয় নদের উপরে পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি হয় অস্থায়ী সেতু। কিন্তু বর্ষা এলেই ধুয়ে যায় সেটি। সমস্যায় পড়েন দু’পাড়ের বাসিন্দারা। প্রশাসন স্থায়ী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। ফলে বর্ষা এলেই চরম দুর্ভোগে পড়েন কবি নজরুল ইসলামের জন্মস্থান জামুড়িয়ার চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চুরুলিয়ার অন্য পাড়ে রয়েছে বীরভূম ও ঝাড়খণ্ডের নলা জেলার বেশ কিছু এলাকা। ভরা বর্ষায় সেতু ভেঙে যাওয়ার পরে অজয়ের অবস্থা এমন হয় যে, কড়াই ও নৌকা চেপে স্কুল-কলেজে আসেন ছাত্রছাত্রীরা। বাকি সময়ে (অস্থায়ী সেতু না থাকলে) পারাপার করতে হয় জল ও বালি ঠেলে। প্রতি বছর শীতকালে বীরভূমের খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি টেন্ডার ডেকে এই নদের উপরে মাটি ও পাথর দিয়ে অস্থায়ী সেতু তৈরি করে বটে, কিন্তু প্রতি বর্ষার শুরুতেই জলে মিশে যায় সেই সেতু। পুনরায় অস্থায়ী সেতু তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত পারাপারে পুনরায় তৈরি হয় সমস্যা।
চুরুলিয়া নজরুল আকাদেমির সম্পাদক তথা নজরুল ইসলামের ভাইপো মাজাহার হোসেন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী সেতু তৈরির দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি মিটলে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন বাড়বে।” চুরুলিয়ার মধুডাঙায় কাজি নজরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সন্ত রাম জানান, ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাঁদের কলেজে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় শ দেড়েক। কিন্তু তারপরে আটটি বিষয়ে সাম্মানিক কোর্স চালু হওয়ায় পরে এখন সেই সংখ্যা সাড়ে সাতশো পেরিয়েছে। কিন্তু সেতু না থাকায় বীরভূম, ঝাড়খণ্ড থেকে ছাত্রী মেলে না। সন্তবাবুর দাবি, “বর্ষায় ছাত্ররা অনেকেই কড়াই করে আসতে বাধ্য হয়। এই কারণে আমরা খুব চিন্তায় থাকি। অজয়ের উপরে যদি স্থায়ী সেতু তৈরি হয় তাহলে আমাদের কলেজে ছাত্রছাত্রী বাড়বে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু কলেজে ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়া ও যাতায়াতে সুবিধাই নয়, স্থায়ী সেতু তৈরি হলে এলাকার অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আসবে। অজয়ের দু’পাড়ে বসবাস করা বীরভুমের বড়কলার বাসিন্দা পরিমল মণ্ডল, ডামরার দুর্গাদাস পাল, ভিরানির তপন চক্রবর্তী, ঝাড়খণ্ডের নলা জেলার পাহারপুরের বাসিন্দা নিমাই চক্রবর্তীরা জানান, বর্তমানে জামুড়িয়ার মানুষকে অজয়ের অন্য পাড়ে যাওয়ার জন্য পাণ্ডবেশ্বর ঘুরে যেতে হচ্ছে। একই ভাবে বীরভূম, ঝাড়খণ্ডের নলা জেলা থেকে কেউ জামুড়িয়া আসতে চাইলে ভায়া পাণ্ডবেশ্বর ছাড়া উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্থায়ী সেতু তৈরি হয়ে গেলে দু’পাড়ের মানুষই কম সময়ে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবেন। একই সময়ে বাঁচবে পণ্য পরিবহনের খরচ।
প্রতি বছর অস্থায়ী সেতু তৈরির বদলে স্থায়ী সেতুর দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। তৃণমুলের জামুড়িয়া এক নম্বর ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় বলেন, “স্থায়ী সেতু হলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুরুলিয়ার অন্য পাড়ের মানুষের দুরত্ব কমে যাবে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা ব্রজনারায়ণ রায় বলেন, “স্থায়ী সেতু তৈরি হলে সিউড়ির সঙ্গে চুরুলিয়ার দুরুত্ব অর্ধেক হয়ে যাবে। উপকার পাবেন জামুড়িয়া, দোমহানি-সহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ।” এই বিষয়ে জেলা পরিষদের কাছে সেতু নির্মাণের দাবিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্ধমান জেলা পরিষদ সভাপতি দেবু টুডু জানান, এই নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সমীক্ষা হওয়ার পরে কাজ শুরু হবে।
সামনের বর্ষার আগে কাজ শেষ না হলে অবশ্য এ বারও অজয় পারাপারে ভরসা কড়াই।