১১৫ কোটি টাকা অনাদায়ী কেন, প্রশ্ন ব্যাঙ্কের সভায়

বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের খেলাপি ঋণ নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি এই ব্যাঙ্কে ঋণ বাবদ ১১৫ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। কারা এই ঋণ শোধ করেননি, তা জানতে হবে।” তৃণমূলের জামালপুরের বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব উজ্জ্বল প্রামাণিক এবং বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুও এত টাকা অনাদায়ী পড়ে থাকার জন্য ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির কৈফিয়ত তলব করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৭
Share:

বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের খেলাপি ঋণ নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “আমি শুনেছি এই ব্যাঙ্কে ঋণ বাবদ ১১৫ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। কারা এই ঋণ শোধ করেননি, তা জানতে হবে।” তৃণমূলের জামালপুরের বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব উজ্জ্বল প্রামাণিক এবং বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুও এত টাকা অনাদায়ী পড়ে থাকার জন্য ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির কৈফিয়ত তলব করেন। ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের অবশ্য বক্তব্য, তাঁদের মোট আমানতের অনুপাতে অনাদায়ী ঋণ খুব বেশি নয়। ফলে ব্যাঙ্কের কোনও ঝুঁকি নেই।

Advertisement

মঙ্গলবার বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের এটিএম উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল। বর্ধমান, দুর্গাপুর, কালনা, শ্যামসুন্দর ও মেমারিতে ব্যাঙ্কের এটিএম এ দিন কাজ শুরু করল। বর্ধমান শহরে জিটি রোডের টাউন হলের পাশে সমবায় ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় দফতরের লাগোয়া সভাস্থলে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বপনবাবু, উজ্জ্বলবাবুরা। ক্ষুদ্র, কুটির ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপনবাবু আরও অভিযোগ করেন, এই ব্যাঙ্ক থেকে ক্ষুদ্রশিল্প করতে লোকে ঋণ পাচ্ছেন না।

১১৫ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণের বিষয়ে শুনে সভায় হাজির অনেক গ্রাহক প্রশ্ন করতে শুরু করেন, তাহলে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠান কি দেউলিয়া হতে চলেছে?

Advertisement

এই সমবায় ব্যাঙ্কের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক তথা রাজ্য জয়েন্ট রেজিস্ট্রার অব কো-অপারেটিভ চিন্ময় গুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমাদের ব্যাঙ্কের অবস্থা মোটেই এত খারাপ নয় যে আমরা দেউলিয়া হতে বসেছি। গোটা এশিয়ার মধ্যে আমরা সম্পদের দিক থেকে সেরা সমবায় ব্যাঙ্ক।” তিনি জানান, ব্যাঙ্কের সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ১৬৫০ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম বাবদ দেওয়া হয়েছে মোট ৭০০ কোটি টাকা। অতএব অনাদায়ী ঋণের জন্য ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, দাবি তাঁর।

অনাদায়ী ১১৫ কোটি টাকা ঋণ কোন কোন খাতে দেওয়া হয়েছে, তা-ও জানান চিন্ময়বাবু। স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ ২৬ কোটি, মধ্যমেয়াদি কৃষি ঋণ ১০ কোটি, তন্তুবায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেওয়া ঋণ ২৫ কোটি, ইঞ্জিনিয়ার্স লেবার কো-অপারেটিভকে ১৬ কোটি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে প্রায় ৭ কোটি, সব মিলিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৮৪ কোটি টাকা। সমবায় সমিতিগুলির অপরিশোধিত ঋণ ১৫-১৬ কোটি টাকা, জানান চিন্ময়বাবু।

চিন্ময়বাবুর আরও দাবি, নাবার্ডের কাছে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পুনর্জীবন ও পুনর্গঠন বাবদ ২৬ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা পাওনা আছে ব্যাঙ্কের। তন্তুবায় সমবায় সমিতি বাবদ কেন্দ্রের কাছে ব্যাঙ্কের পাওনা সাড়ে সাত কোটি টাকা।

তাহলে স্বপনবাবু, উজ্জ্বলবাবুরা ১১৫ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ নিয়ে এত হইচই করলেন কেন? চিন্ময়বাবু বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমি আমাদের ব্যাঙ্কের বাস্তব পরিস্থিতি কী তা জানিয়েছি।” তবে ঘটনা হল, বর্ধমানের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি এখনও সিপিএম-এর দখলে। ফলে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণেই ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্বপনবাবুরা, মনে করছেন ব্যাঙ্কের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন