প্রয়াত ‘বড়মা’, মতুয়া মহাসংঘের পাশে মুখ্যমন্ত্রী, টুইট মোদীর

সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দেখতে যান। বাড়ি ফিরে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে শুনে ফের হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পৌঁছনোর পরেই আসে জীবনাবসানের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবী প্রয়াত। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

মতুয়া মহাসংঘের ‘বড়মা’ শতায়ু বীণাপাণি দেবীর জীবনাবসান হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫২ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিতে ভুগছিলেন। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় দুটি ফুসফুস আক্রান্ত হয়। অন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। কল্যাণীর ওই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম-এ আনা হয় রবিবার। এ দিন সকাল থেকে তাঁর অবস্থার চরম অবনতি হয়।

Advertisement

সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দেখতে যান। বাড়ি ফিরে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে শুনে ফের হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পৌঁছনোর পরেই আসে জীবনাবসানের খবর। আজ বুধবার সকাল আটটায় বড়মার দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর ঠাকুরনগরের বাড়িতে। রাজ্য সরকারের পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘গান স্যালুট’ দিয়ে ‘বড়মা’-র শেষকৃত্য হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

লোকসভা নির্বাচনের মুখে বড়মার মৃত্যু রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ‘বড়মা’-র ঘনিষ্ঠ। এবং নানাভাবে তাঁর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও বারবার তিনি ‘বড়মা’র কাছে গেছেন। তাঁর প্রয়াত পুত্র কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালাকে লোকসভা ভোটে জিতিয়ে সাংসদও করেছেন তৃণমূলনেত্রী। পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী ও হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ‘বড়মা’-র দেখভালের জন্য কার্যত দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

শোক জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘২০-২৫ বছর ধরে বড়মার সঙ্গে যোগাযোগ। আমাদের সব রাজনৈতিক সংগ্রামে তাঁর আশীর্বাদ ও সমর্থন পেয়েছি। তাঁর মৃত্যু শুধু মতুয়া সমাজের নয়, আমাদের সকলের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি।’’

বিজেপি সম্প্রতি বড়মার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। বড়মার ছোট ছেলে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে শান্তনু এখন বিজেপির সঙ্গে। ফলে তাঁর মাধ্যমে বিজেপি-ও ঠাকুরনগরের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ঠাকুরনগরে গিয়ে ‘বড়মা’-কে প্রণাম করে তাঁর সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। এখন ‘বড়মা’র মৃত্যুর পরে তারাও কতটা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করে পর্যবেক্ষকদের নজর আছে সেদিকেও। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন, ‘‘বড়মা আমাদের সময়ের এক জন আইকন। বহু মানুষের কাছে তিনি বিরাট শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। তাঁর উচ্চ মতাদর্শ পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করবে। এই দুঃখের সময়ে আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের পাশে আছি।’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করেই কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আজ কেউ কেউ হঠাৎ জুটেছে। এত বছর বড়মার কোনও খবর তাঁরা রাখেননি। তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক সংস্কার। আমাদের সরকার ঠাকুরনগরে পিআর ঠাকুর কলেজ করেছে। গুরুচাঁদ-হরিচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। এলাকার উন্নয়ন করেছে। তাঁকে কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘যাঁরা এখন বড়মার চারপাশে ভিড় করে ‘অন্য আখের’ গোছাতে চাইছেন এত দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন? মতুয়া সম্প্রদায়ের সবাই জানেন বড়মার পাশে কে ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ নন।’’

‘বড়মা’-র মৃত্যুসংবাদ ঘোষিত হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কোনও শোকবার্তা বা বিবৃতি পাওয়া যায়নি। দলীয় সূত্রে বলা হয়, নেতারা বৈঠকে ব্যস্ত আছেন। পরে রাহুল সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা গভীর শোকাহত। মতুয়া সমাজের বিরাট ক্ষতি হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন