রাহুলের সামনে এখন উভয় সঙ্কট। —ফাইল চিত্র।
দলের ‘যুদ্ধ-ঘরে’ একে একে ডেকে নিলেন জনাচল্লিশ নেতাকে। বঙ্গ কংগ্রেসের সিংহ ভাগ নেতাই রাহুল গাঁধীকে জানালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গেলে লোকসান। বামেদের সঙ্গে যদি না-ও যাওয়া হয়, প্রয়োজনে তাঁরা একলা চলতেও রাজি।
মমতার সঙ্গ যাঁরা চান, তাঁদের মধ্যে সাংসদ মৌসম বেনজির নুর আজ ছিলেন না দিল্লিতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুম’-এ কংগ্রেস সভাপতির ডাকা বৈঠকে। কিন্তু সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, বিধায়ক মইনুল হকেরা তৃণমূলের সঙ্গে যাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছেন রাহুলের কাছে। যাঁরা নিজেরাই আবার তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে আছেন বলে জোর চর্চা!
এর ফলে রাহুলের সামনে এখন উভয় সঙ্কট। মমতার সঙ্গে না গেলে আরও কিছু নেতা তৃণমূলে চলে যাবেন। কিন্তু মমতা জোটের কোনও প্রস্তাব দিচ্ছেন না। উল্টে রাহুল যে রাজনৈতিক ভাবে সমকক্ষ নন, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তা সবিস্তার বুঝিয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রে মোদী-বিরোধী মহাজোটের পথে হাঁটতে গেলে মমতার সঙ্গে বিবাদের পথেও যেতে পারছেন না কংগ্রেস সভাপতি। আবার রাজ্যে দলের পায়ের তলার মাটি ধরে রাখতে না পারলে কোনও দর কষাকষির জায়গাতেও থাকতে পারবে না কংগ্রেস!
তা হলে এখন কী করবেন রাহুল?
বঙ্গের নেতাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রাহুলের সঙ্গী হিসেবে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গৌরব গগৈ। তাঁর মতে, ‘‘আমাদের কাছে এখন প্রধান লক্ষ্য, দলকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো। যাতে চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায়।’’ এআইসিসি-র এক নেতা জানান, ‘অগণতান্ত্রিক’ ভাবে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে দলের নেতাদের রোষের কারণ বুঝতে পেরেছেন রাহুল। বৈঠকে আজ দীপা দাশমুন্সি, মনোজ চক্রবর্তীরা পঞ্চায়েতে ‘প্রসহনে’র প্রসঙ্গ তুলেছেন। এর পরে জোট নিয়ে ‘উপযুক্ত’ সময়ে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত দলকে শক্ত করতে সংগঠনে রদবদল করতে হলে সে সিদ্ধান্তও রাহুল দ্রুত নিতে চান। কারণ, রাজ্য নেতৃত্বে বদলের দাবিও তুলেছেন অনেকে। তৃণমূলের দিকে যাঁরা পা বাড়িয়ে আছেন, তাঁদেরও বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। মইনুল যেমন বলছেন, বামেদের সঙ্গে জোট ‘আত্মঘাতী’ হবে। তিনি নিজে কী করবেন, সেটা ঠিক করবেন রাহুলের সিদ্ধান্ত দেখে।
ডালুবাবু রাহুলকে বলেছেন, বামেদের সঙ্গে যাওয়ার কোনও অর্থই নেই, তাদের ভোট নেই। তৃণমূলের সঙ্গেই যাওয়া উচিত। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান তৃণমূল-বিরোধী অবস্থানে একমত। সোমেন মিত্রের মতো কিছু নেতার অভিমত, দলের স্বার্থ দেখলে সিপিএম আর ভোটের স্বার্থ দেখলে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, দলটাকে ‘শেষ’ করে দেবে তৃণমূল! সিদ্ধান্তের ভার হাইকম্যান্ডের উপরে ছাড়ছেন তাঁরা