‘শিলিগুড়ি মডেল’ নয়। সরাসরি বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনী জোট করলেই লাভবান হবে কংগ্রেস। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে এ কথাই জানিয়ে এসেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সদ্য শেষ হওয়া সিপিএমের প্লেনামে কংগ্রেসের প্রশ্নে নমনীয় মনোভাব নেওয়ার কথাই বলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটেরা। দলের রাজ্য কমিটিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সূর্যকান্ত মিশ্র বাম শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন। সিপিএম নেতারা তৃণমূলের মোকাবিলায় সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জোটের কথা বলছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা সনিয়া-রাহুলকে জানিয়ে এসেছিলেন, হাইকম্যান্ড যেন তৃণমূলের সঙ্গে কোনও ভাবেই জোটের কথা না ভাবেন। তা হলে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের যে-টুকু শক্তি রয়েছে, সে-টুকুও মুছে যাবে। প্রদেশ কংগ্রেসের একটি বড় গোষ্ঠী তৃণমূলের বদলে বামেদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার পক্ষে। এ বার সেই নেতারাই সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে যুক্তি দিয়েছেন, শিলিগুড়ি মডেলের বাইরে গিয়ে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হোক।
কেন এই যুক্তি? প্রদেশ নেতাদের যুক্তি, ‘শিলিগুড়ি মডেল’ হল স্থানীয় স্তরে সমঝোতা। যাতে আসন সমঝোতা না হলেও, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মহকুমা স্তর পর্যন্ত কংগ্রেস ও বাম ভোট এক জায়গায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়। কিন্তু এতে যার বেশি শক্তি, তারই লাভ হবে। শিলিগুড়িতেও বামেদের যতটা লাভ হয়েছিল, কংগ্রেসের ততটা হয়নি। রাজ্য স্তরে এই ‘মডেল’ অনুসরণ করতে গেলে আরও সমস্যা হবে। তার বদলে ২৯৪টি বিধানসভা আসনে সমঝোতা হোক।
প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্র ভোটের হারের হিসেব-নিকেশ দিয়ে সনিয়াকে বুঝিয়েছেন, গত লোকসভায় তৃণমূল ৪২টি-র মধ্যে ৩৪টি আসন জিতলেও ৩৯ শতাংশর মতো ভোট পেয়েছিল। বামেরা পেয়েছিল ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, কংগ্রেস ১০ শতাংশ। বিজেপি ১৭ শতাংশ পেয়ে সকলের নজর কেড়েছিল। লোকসভার ফলাফলে তৃণমূল ২১৪টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল। বিজেপি ২০টি আসনে। বাম ও কংগ্রেস প্রায় কাছাকাছি, যথাক্রমে ৩১টি ও ২৯টি আসনে এগিয়ে ছিল।
বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়ালকারী কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, এ বার বিজেপির ভোট ১৭ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যাবে। এর অর্ধেকও বাম ও কংগ্রেসের কাছে গেলে জোট লাভবান হবে। জোট হলে কংগ্রেস ও বামেরা মিলে রাজ্যের অন্তত ১৭০টি আসন জিততে পারে। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত তৃণমূল ৪টির বেশি আসনে জিততে পারবে না বলেই এই নেতাদের মত। লোকসভা ভোটেও সেখানে কংগ্রেস ও বামেদের মধ্যেই মূলত লড়াই হয়েছে। তৃণমূলের আসল শক্তি দক্ষিণবঙ্গে। প্রদেশ নেতাদের মতে, সেখানেই বাম ও কংগ্রেস এক হয়ে তৃণমূলের রিগিং রুখে দিতে পারলে তাদের শক্তি আরও কমবে।
প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, আব্দুল মান্নান, আবু হাসেম খান চৌধুরী, ওমপ্রকাশ মিশ্ররা সনিয়ার কাছে যেমন তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন, তেমনই তাঁরা বামেদের সঙ্গে জোট করার বিষয়েও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে দরবার করেছেন। এত দিন একা লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করা কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কথাতেও এখন বাম-কংগ্রেস জোটে সমর্থনের ইঙ্গিত মিলছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এত দিন এ বিষয়ে ধোঁয়াশা রাখছিলেন। কিন্তু এখন তিনিও এ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা বলতে শুরু করেছেন।
কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, হয় বামেদের সঙ্গে জোট হোক। না হলে তাঁরা একাই লড়বেন। তবে জোটের বদলে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হলে তৃণমূলেরই সুবিধা হবে।
আর তৃণমূলের সঙ্গে জোট? নৈব নৈব চ, বলছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা।