চিকিৎসকদের পাশে দেব থেকে কাকলির ছেলে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিমের পরে সেই তালিকায় সংযোজন চিকিৎসক বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০৩:৪৭
Share:

সময় গড়াচ্ছে। আর এনআরএস-কাণ্ড নিয়ে এ বার তৃণমূলের পরিবার অন্দর থেকেই জলবাতাস পাচ্ছে ‘ভিন্ন সুর’।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিমের পরে সেই তালিকায় সংযোজন চিকিৎসক বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার। তিনি তৃণমূলের লোকসভার সহ-দলনেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদারের ছেলে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনরত ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমি লজ্জিত’ এবং ‘রাজনীতি গোল্লায় যাক’। একই সঙ্গে ফেসবুকে নিজেকে তৃণমূল-সমর্থক এবং তৃণমূল সাংসদের পুত্র হিসেবে উল্লেখ করে বৈদ্যনাথ লিখেছেন, ‘যদি দলের কোনও সদস্য ডাক্তারের সমালোচনা করেন, তা হলে তাঁদের হয়ে ক্ষমা চাইছি।’ লেখেন, ‘তোরা আমায় ক্ষমা করে দে ভাই।’

পরে অবশ্য ফেসবুকের পোস্টে কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করেন কাকলি-পুত্র। কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, ‘ঘরের ভিতরের’ চাপ আসায় বৈদ্যনাথ শব্দগুলি বদল করে থাকতে পারেন। তেমন কিছু না-লিখলেও ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে চিকিৎসকদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি লোগো ব্যবহার করেছেন কাকলির অন্য চিকিৎসক ছেলে বিশ্বনাথ।

Advertisement

সতীর্থ সাংসদের ছেলের পথে না-হাঁটলেও চিকিৎসকদের সুরক্ষার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)। সুরক্ষা যে চিকিৎসকদের অধিকার, তা জানাতে ভোলেননি বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীও। একই অভিমত অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের।

চিকিৎসকেরা আমজনতার প্রাণ বাঁচান। তাঁরা কেন বারবার মার খাবেন— প্রশ্ন তুলেছেন দেব। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘যাঁরা আমাদের প্রাণ বাঁচান, তাঁরা কেন বারবার মার খাবেন? তাঁদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’ এ ভাবে প্রশ্ন না-তুললেও চিরঞ্জিতের বক্তব্য, সুরক্ষা চিকিৎসকের অধিকার। তাঁর কথায়, ‘‘সুরক্ষা ওঁদের (চিকিৎসক) অধিকার। সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ আর ফেসবুক পোস্টে রাজ্য জনপরিষেবা অধিকার কমিশনের সদস্য রুদ্রনীল লিখেছেন, ‘পরিষেবা দেওয়াটা যদি ডাক্তারের ডিউটি হয়, তবে সুরক্ষা দেওয়াটাও প্রশাসনের ডিউটি।’

কাকলি-পুত্র বৈদ্যনাথের প্রশ্ন, সোমবার রাতে কী ভাবে ২০০ লোক এনআরএসে ঢুকে ‘তাণ্ডব’ চালাল? তার মধ্যে মাত্র পাঁচ জন গ্রেফতার, এটাও মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা নিরাপদ নন, তাঁদের কুপিয়ে খুন করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই চিকিৎসক। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, চিকিৎসকেরা মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে রাজনীতির রং দেওয়া হচ্ছে। অসহায় রোগীদের কথা মাথায় রেখে ‘স্ট্রাইক’ নিয়ে ভাবার আবেদনও জানিয়েছেন বৈদ্যনাথ।

জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘সুরক্ষা’র প্রসঙ্গের পাশাপাশি অসুস্থদের পাশে চিকিৎসকদের দাঁড়ানোর আবেদনও জানিয়েছেন দেব। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘...লক্ষ লক্ষ অসুস্থ মানুষ ডাক্তারবাবুদের দিকে তাকিয়ে। আপনারা পাশে না-দাঁড়ালে তাঁরা অসহায়। সবার শুভবুদ্ধি ফিরে আসুক, সমস্যার সমাধান চাই।’ এই পরিস্থিতিতে ‘মুখ্যমন্ত্রী একটা সুন্দর সমাধানের ব্যবস্থা করবেন’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন বারাসতের তৃণমূলের বিধায়ক চিরঞ্জিৎ। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিদাওয়ার নিয়ে দ্বিমত না-থাকলেও তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবায় যোগ দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীদের কথা ভাবা উচিত চিকিৎসকদের। মানবিকতার কারণে পরিষেবায় যোগ দেওয়া উচিত তাঁদের।’’ দেবশ্রীর বক্তব্য, জুনিয়র চিকিৎসকদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত।

ফিরহাদ-কন্যা শাব্বা জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে ‘লজ্জা’ প্রকাশ করেছিলেন দলীয় নেতৃত্বের নীরবতায়। তাঁর প্রতিবাদী সত্তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তানিয়ে ভরদ্বাজ। কয়েক বছর আগে যাঁর প্রশ্ন শুনে একটি সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠান-মঞ্চ ছেড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন