বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে স্বাস্থ্যসাথী-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবাসীর চাহিদার একটা ছবি পেয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল তারা। সোমবার বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, এই কর্মসূচিতে আঞ্চলিক স্তরে ছোটখাটো সমস্যার সমাধান হবে। ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ‘দুয়ারে সরকার’ চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি।
পর্যবেক্ষক শিবিরের মতে, ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের শুরুতে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষিত হবে। তার আগে পর্যন্ত পরিষেবা নিশ্চিত করতে সরকারি স্তরে লাগাতার এই সব কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
“দুয়ারে সরকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। বড় পরিকাঠামোর কাজ আগেই অনেকটা হয়ে গিয়েছে। এ বার মেটানো হবে মানুষের ছোট ছোট প্রয়োজন। খুব ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করা হবে,” এ দিন বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অনেক প্রস্তাব আসে। ছোটখাটো অনেক বিষয় থাকে, যেগুলি পাড়া স্তরে পরিষেবা উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। এমন প্রায় ১০ হাজার দরখাস্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। ২ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন বেরোবে। পাড়ায় সমাধানের জন্য নতুন অফিসার নিয়ে পৃথক দল গড়া হচ্ছে। একটি মূল টাস্ক ফোর্স করা তৈরি হবে। তাদের অধীনে সচিব-অফিসারেরা নতুন কর্মসূচি সামলাবেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর সঙ্গে কি টক্কর নতুন পড়শি বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের
আরও পড়ুন: দিল্লিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অমিত শাহের সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা
স্কুলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, পাড়ায় শৌচাগার, নিকাশি, সংযোগকারী রাস্তা, কালভার্ট, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মেরামতি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও প্রাথমিক শিক্ষকের অভাব, অ্যাম্বুল্যান্স না-থাকা, জলের কল বা নলকূপ, জঞ্জাল সাফাই, আলো, জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে রাজ্য। ৩৪১টি ব্লক, ১১৮টি পুরসভা এবং সাতটি পুর নিগমে এই কর্মসূচি চলবে। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কোনও আবেদন বা অভিযোগ থাকলে দুয়ারে সরকারের শিবিরে তা জমা দেওয়া যাবে। এলাকার নিরিখে সেগুলি বাছাই করে পরিষেবা নিশ্চিত করার কাজ করবে প্রশাসন। এতে অন্তত দু’কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন বলে সরকারের হিসেব।
পর্যবেক্ষক শিবিরের বক্তব্য, স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন সমস্যা থেকেই প্রশাসন সম্পর্কে জনমানসে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। সমস্যা ছোট হলেও দীর্ঘদিন তা অবহেলিত থাকলে মানুষ সেটা ভাল ভাবে গ্রহণ করেন না। লোকসভার তুলনায় বিধানসভা ভোটে এই ধরনের স্থানীয় সমস্যা বেশি প্রভাব ফেলে। সে-দিক থেকে ভোটের আগে একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত পরিষেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘আসলে অনেক দিন মেলা, খেলা, লীলা হয়নি! তাই দলের লোকেরা খেতে পাননি। শরীর শুকিয়ে গিয়েছে। তাই তাঁদের টাকা দিতে এ-সব ক্যাম্প করা হচ্ছে। কী লাভ হয়েছে? স্বাস্থ্যসাথীর ১০ হাজার কার্ড দেবেন ১০ কোটি লোকের জন্য। যদি পাঁচ শতাংশ লোকও যায়, ৫০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কোথা থেকে আসবে? স্বাস্থ্য বাজেট ১২ হাজার কোটি টাকার। এ ক্ষেত্রে তিন মাসেই খরচ হবে সাড়ে ১২ হাজার কোটি।’’