ফের বার্তা বুদ্ধের

জোট চেয়ে চাপ বাড়াল বাংলা, শরিকরা কথায় রাজি কংগ্রেসের সঙ্গে

রাত পোহালে জোট-প্রশ্নে রাজ্য সিপিএমের মতামত শুনতে বসছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটেরা। তার আগের দিন নিজেদের মনোভাব ফের খোলসা করে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়িয়ে রাখল আলিমুদ্দিন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

নজরে নেতা। বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুরের সভায় ঢুকছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রাত পোহালে জোট-প্রশ্নে রাজ্য সিপিএমের মতামত শুনতে বসছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটেরা। তার আগের দিন নিজেদের মনোভাব ফের খোলসা করে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে চাপ বাড়িয়ে রাখল আলিমুদ্দিন!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সিপিএম রাজ্য সদর দফতরে বৈঠকে বসে বামফ্রন্টের শরিক নেতারা মত দিলেন, কংগ্রেসের তরফে প্রস্তাব এলে জোট-আলোচনায় তাঁরা রাজি। জোট-প্রশ্নে ফ্রন্ট শরিকদের সংশয় ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের চাপ অগ্রাহ্য করে আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেওয়া যে উচিত হবে না, বুঝেই আলোচনায় সায় দিয়েছেন শরিকেরা। আর এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরোক্ষে এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব সরাসরি কংগ্রেসের প্রতি সমঝোতার বার্তা দিয়েছেন। এই জোড়া ঘটনায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের আগে জোটের পক্ষে বাতাবরণ আরও জোরালো হয়েছে!

আলিমুদ্দিনের জোট প্রয়াসে আর একটি বড় কাঁটা দলেরই কেরল লবি। যার নেতৃত্বে খোদ প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। এই নেতাদের যুক্তি, এক বছর আগে গৃহীত পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তাবে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম বোঝাপড়া বা নির্বাচনী সমঝোতা হবে না। তা হলে সেই অবস্থান থেকে সরে আসা হবে কেন? সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেডের নেতাদের পাল্টা যুক্তি, এটা দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের দাবি। যা উপেক্ষা করার কোনও অবকাশ নেই। পাশাপাশি, বারবার দক্ষিণী লবির চাপের মুখে কেন বাংলাকে তার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বলি দিতে হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এ বার যে তাঁরা অনড় থাকবেন, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন আলিমুদ্দিনের নেতারা। এই অবস্থায়, বৃহস্পতিবারই এক কদম পিছু হটে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘রণকৌশলগত সমঝোতা’-য় সায় দিতে রাজি হয়েছেন কারাটের অনুগামীরা। (সবিস্তার পৃঃ ৫) বড় লড়াইয়ের আগে আলিমুদ্দিনের পক্ষে যা স্বস্তির।

Advertisement

ব্যারাকপুরে শিল্প পুনরুজ্জীবনের দাবিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের মহামিছিল ছিল এ দিন। বরাহনগর ও কাঁচরাপাড়া থেকে বিরাট দু’টি মিছিল আসে ব্যারাকপুরে। সেখানে এক সমাবেশে বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, চাষি ফসলের দাম পাচ্ছে না। শিক্ষায় নৈরাজ্য চলছে। শিল্প নেই, তরুণদের কাজ নেই। আর রাজ্য সরকার দেদার টাকা বিলোচ্ছে আর উৎসব করছে। এই অবস্থা বদলের জন্যই বিধানসভা ভোটে লড়াই হবে জানিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘কথা হচ্ছে জোট-জোট! কিছু মানুষ বলছেন, তোমরা সব এক হয়ে যাও! ব্যক্তির মতের পার্থক্য হয়, দলেরও মতপার্থক্য থাকে। তবে একটি বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, এই সরকারকে সরাতে হবে। সে জন্য দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে সব মানুষের কাছে যেতে হবে।’’

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় যদি কংগ্রেসের প্রতি প্রচ্ছন্ন বার্তা থাকে, তা হলে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু ছিলেন আরও চাঁছাছোলা। দলের অন্দরে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রবল প্রবক্তা। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে যাব কি না, দু’-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা দিল্লি যাব, আলোচনা হবে। তবে আমরা একা লড়ব আর মমতা জিতে যাবেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না!’’

গৌতমবাবুদের এই সওয়ালের আগে এ দিন বামফ্রন্ট বৈঠকে জোট নিয়ে আলোচনায় সিপিআইয়ের প্রবোধ পণ্ডা, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী প্রথমে বলেন, তাঁরা বরাবর কংগ্রেসের উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তা মেনেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, কিন্তু তার জন্য কি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল করে দেওয়া উচিত হবে? ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা তখন আবার বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে তাঁদের কিছু সমস্যা আছে। তা ছাড়া, কংগ্রেসই এ রাজ্যে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল! তারা ভুল স্বীকার করবে কি? তবে এ সব সত্ত্বেও কংগ্রেসের দিক থেকে প্রস্তাব এলে আলোচনায় বসার পক্ষেই মত দেন শরিক নেতারা। পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘জোট নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে শরিক দলগুলি একমত। তবে জোটের প্রস্তাব আসতে হবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।’’

এহেন দাবি সম্পর্কে অবশ্য এ দিন কিঞ্চিৎ কড়া প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘আলোচনা তো হবে কেন্দ্রীয় স্তরে। বিমানবাবুরা এখানে এ কথা বলেন কী করে?’’ তবে একই সঙ্গে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করা যে কংগ্রেসের অগ্রাধিকার, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলই সবচেয়ে বড় বিপদ। তাই তাদের উচ্ছেদ করা ছাড়া অন্য কিছু ভাববার অবকাশ নেই।’’

কংগ্রেস-বাম জোটের তৎপরতা দেখে উদ্বেগ বাড়ছে শাসক শিবিরে। পাল্টা আক্রমণের পথ নিয়েছে তারা। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেমন এ দিনই বলেছেন, ‘‘ওদের রাজনৈতিক দৈন্য প্রকাশ পাচ্ছে! সিপিএম আসলে কংগ্রেসের খুঁটি ধরে দাঁড়াতে চাইছে।’’

কলকাতা পুরসভার সামনে এ দিনই বামফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশে সূর্যবাবু পাল্টা বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের বিকল্প সরকার গড়ার জন্য লড়াই করছি। ওঁকে (মমতা) সবাই ছেড়ে যাচ্ছেন। তাই ওঁর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে!’’ কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল— সবার কাছেই ‘স্বৈরাচারী’ সরকার বদলের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন সূর্যবাবু। প্রয়োজনে তিনি নানুরের মতো ঝান্ডা ছাড়া মিছিলের কথাও বলেন। যে মিছিলে মহম্মদ সেলিমের পাশেই অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের ওমপ্রকাশ মিশ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন