ভোটের ফলে বাঘের ছায়া, চাঁদড়ায় বিজেপি

শুধু বাগঘোরা নয়, গোটা চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতটাই বিজেপির দখলে এসেছে। চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১৪।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০৩:২০
Share:

—ফাইল চিত্র

১৩ এপ্রিল দুপুর। চাঁদড়ার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গলের দেহ মেলার পরে তখন তোলপাড় রাজ্য। মানুষের হাতে বাঘের মৃত্যু নিয়ে চলছে বিতর্ক।

Advertisement

সে পর্বেও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ তৃণমূল নেতার গলায় ছিল স্বস্তির সুর। কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘‘যাক, এ বার পঞ্চায়েত ভোটটা ভালয় ভালয় উতরে যাবে।’’ ভোটের ফল অবশ্য ততটা স্বস্তি দিল না। যেখানে বাঘ খুন হয়েছিল, মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই বাগঘোরায় পদ্ম ফুটল।

শুধু বাগঘোরা নয়, গোটা চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতটাই বিজেপির দখলে এসেছে। চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১৪। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮টি, তৃণমূল ৬টি। বাগঘোরা সংসদের বিজেপি প্রার্থী পার্বতী মানা তৃণমূলের মল্লিকা মাহাতোকে হারিয়েছেন ৫৬ ভোটে।

Advertisement

পাশের ধেড়ুয়া, মণিদহেও শাসক দলকে জোর টক্কর দিয়েছে গেরুয়া-শিবির। ধেড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৪টি, বিজেপিও ৪টি। মণিদহে ১৩টির মধ্যে ৭টি পেয়েছে তৃণমূল, ৬টি বিজেপি।

ফলে তা হলে বাঘ খুনের ছায়া পড়ল? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির জবাব, “কেন এই ফল হল দেখছি। তবে বিজেপির লোকজন ওই এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ যদিও বলেন, “ভুল আমরা বোঝাইনি, তৃণমূল বুঝিয়েছে। তৃণমূল যে ভাঁওতা দিয়ে এসেছে, সেটা ওই এলাকার মানুষজন ধরে ফেলেছেন।”

জঙ্গলমহলে হাতির দাপাদাপি নতুন নয়। তবে এ বার জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের ঘুম কেড়ে নেয় রয়্যাল বেঙ্গল। লালগড়ে প্রথম তার উদয় হলেও ক্রমে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে মেদিনীপুর সদর ব্লকের এই এলাকা। বাঘের হানায় কয়েক জন জখম হন। তখন বন দফতর জঙ্গল এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে লাগাতার প্রচার করেছিল। জঙ্গলে কাঠ-পাতা কুড়োনো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পেটে টান পড়ছিল জঙ্গলবাসীদের। একদিকে বাঘের ধরা না পড়া, অন্য দিকে বাঘের হানায় একের পর এক জখমের ঘটনায় ছড়ায় ক্ষোভ। বাঘে কামড়ালে ক্ষতিপূরণের দাবিও ওঠে। ক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়ে তৃণমূল ওই এলাকার গ্রামগুলোয় প্রচারে পর্যন্ত যেতে পারছিল না।

তখন স্বস্তি আনে বাঘের মৃত্যু। সেই বাঘ খুনে জঙ্গলবাসীদের দিকেই আঙুল ওঠায় নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়। বাঘ খুনে কারও নামে এফআইআর হয়নি, শিকার উৎসবে কেউ বাধা দেবে না— এ সব বোঝাতে মরিয়া হয়ে ওঠে শাসকদল। তৃণমূল সূত্রের খবর, ক্ষোভ সামালাতে তখন মুখ্যমন্ত্রীর ‘দাওয়াই’ মেনে আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। ভোটবাক্সে সেই মরিয়া চেষ্টার ফল পায়নি শাসক দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন