এ-ও সত্যি!
কেন্দ্র ও রাজ্যে যে দু’দল হরবকত লড়ছে, তারাই জোট বেঁধে প্রার্থী দিয়েছে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে। এখানে ত্রি-স্তরেই বোঝাপড়া হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের। হাত ও ঘাসফুলের প্রতীক-সহ জোট প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখাও সারা।
গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো নিচুতলায় এমন জোট অবশ্য অচেনা নয়। কিন্তু যে জেলায় তৃণমূলের একাধিপত্য, সেই পূর্ব মেদিনীপুরে এমন ছবিতে শোরগোল পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এসইউসি-কে ঠেকাতেই কংগ্রেস ও তৃণমূলের এই জোট। বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা বরাবর এসইউসি-র শক্ত ঘাঁটি। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম জমি রক্ষা আন্দোলনে তৃণমূলের সহযোগী ছিল এসইউসি। পরের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূল-এসইউসি জোট হয়েছিল। মিলেছিল জয়ও। তবে সেই হাত ধরাধরি বেশি দিন টেকেনি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয় এসইউসি। বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে চারটিতে জেতেন এসইউসি প্রার্থীরা।
অতীত মনে রেখেই এ বার সব দ্বন্দ্ব ভুলে এখানে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস-তৃণমূল। সেই মতো বল্লুক পূর্ব পাড়া আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন মহিতোষ জানা। আর পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছেন তৃণমূলের জয়দেব বর্মণ এবং মামনি জানা।
এসইউসি যে তাঁদের বড় কাঁটা, সে কথা মানেন কংগ্রেস ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল আহ্বায়ক শরৎ মেট্যার কথায়, ‘‘এখানে প্রধান প্রতিপক্ষ এসইউসি। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হয়েছে। বাকি আসনে আমাদের প্রার্থীদের সমর্থন করবে কংগ্রেস।’’ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি বিজয় সামন্ত বলেন, ‘‘বল্লুক-১ অঞ্চল নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার কথা জানিয়েছিল। আমরা বাধা দিইনি।’’
কিন্তু এতে শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি রয়েছে কি? শরৎবাবুর জবাব, ‘‘আঞ্চলিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরে জোটের কথা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
যাদের ঠেকাতে এই জোট, তারা কিন্তু জনতার ওপর ভরসা রাখছেন। এসইউসি-র নোনাকুড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ দাসের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছি। তাই ওরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। মানুষ নিশ্চয়ই ব্যালটে জবাব দেবেন।’’
এই জোট-যুদ্ধে বল্লুক এখন সরগরম। দেওয়ালে দেওয়ালে জোট প্রার্থীর প্রচার চোখ টানছে বাসিন্দাদেরও। এক গ্রামবাসীর সরেস মন্তব্য, ‘‘দেখুন না, এই গরমে কেমন হাতের ছায়ায় ঘাসফুল বাড়ছে!’’