বদলে গিয়েছে রাজপাট, রয়ে গিয়েছে দানা-উইকেট

তাঁর ‘উইকেট’ পড়েনি, তবে ‘দানা’র দুর্মর শাসনের বিরাম নেই।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০৪:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

সীমানার নাম পদ্মা।

Advertisement

কাঁটাতার নেই, দু’দেশের মাঝে আঁকাবাঁকা বিভাজন টেনে নদী নিশ্চুপে হারিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের রাশজশাহীর দিকে।

ওপারের দুধ-সাদা বক সীমান্তের অনুশাসন না মেনে দিনভর উড়ে আসে এ পাড়ে, বিএসএফের জওয়ান গোঁফে তা দিয়ে বলছেন, ‘‘রাতে আর পাখিরা আসে না, আসে দানা!’’

Advertisement

মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে সিপিএম প্রার্থী বলছিলেন, ‘‘আরে ভাই দানা নিয়ে তাড়া করছে, আর একটু হলেই আমার উইকেটটা পড়ে যেত!’’ তাঁর ‘উইকেট’ পড়েনি, তবে ‘দানা’র দুর্মর শাসনের বিরাম নেই।

ধাঁধা মনে হচ্ছে? মুর্শিদাবাদের ডোমকল জানে, এর মধ্যে কোনও ধাঁধা নেই। বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা দানার (আগ্নেয়াস্ত্র) নিরন্তর ব্যবহার এবং একের পর এক উইকেটের (প্রাণনাশ) পতন— নির্বাচন এলেই ডোমকল তার হিসেব রাখতে পারে না। বছর কয়েক আগেও ডোমকলের ভোটে খুন ছিল নিতান্তই গা-সওয়া ঘটনা। লোকে জানতে চাইতেন, ‘ক’টা উইকেট পড়ল?’

২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে ১৩ জন খুন হন সীমান্ত ঘেঁষা এই এলাকায়। সে বছরই ভোটে স্বামী হারিয়ে ঘোড়ামারার মহিলা বলেছিলেন, ‘‘লাশকে এখানে উইকেট বলে, আমার স্বামীর উইকেট পড়ে গিয়েছিল!’’ সেই উইকেট-পতন গত কয়েক বছরে কমেছে। তবে, ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে এক মাত্র খুনের ঘটনস্থল ছিল এই ডোমকল।

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে উইকেট পড়েনি। ডোমকলের বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ‘‘এ বারের ভোটের তো তাইরে নাইরে দশা! বহু জায়গাতে ভোটই হচ্ছে না। এটাই আমাদের কাছে সবথেকে স্বস্তির।’’ শুধু বিরোধীদের অভিযোগ, দানার দাপটে তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। আর সেই কারণেই, তৃণমূল একাই একশো। যা শুনে ডোমকল পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সৌমিক হোসেন বলছেন, ‘‘দানা-উইকেট, এ সব শব্দের প্রচলন ছিল বাম আমলে। যা খুনোখুনি, তা হয়েছে তা বাম ও কংগ্রেস জমানায়। ক্ষমতায় আসার পরে সেই খুনের রাজনীতিই বন্ধ করেছি আমরা।’’

২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত ডোমকলে রাজপাট ছিল সিপিএম ও কংগ্রেসের। বিধায়ক, সাংসদ থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ সবই ছিল তাদের দখলে। ভোটের মাঠে তৃণ তখনও মূল হয়ে ওঠেনি।

এমনকী, গত বারের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই জমে উঠলেও প্রয়াত মান্নান হোসেনের ছেলে সৌমিক হোসেনকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন সিপিএমের আনিসুর রহমান। হাওয়া ঘুরে গিয়েছিল এর পরেই। বিরোধীদের টিকিটে জয়ী প্রার্থীরা দলে দলে যোগ দিতে শুরু করেন তৃণমূলে। সৌমিক বলছেন, ‘‘ওঁরা বুঝতে পেরেছিলেন তৃণমূলই আসল জায়গা।’’ মাস আটেক আগে ডোমকলের প্রথম পুরভোটে সবক’টি আসন দখল করে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের নামে সেটা ছিল নিছক প্রহসন। পুলিশ, তৃণমূল বাহিনীর দাপট।

সিপিএমের ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই একই ছকে খেলছে তৃণমূল। দানার দাপটে আমরা তো মাঠেই দাঁড়াতে পারলাম না।’’ একই অভিযোগ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর, ‘‘ভোট কোথায়! এ তো তৃণমূলের নিরন্তর সন্ত্রাস!’’

অভিযোগ, লাঠি, কোদালের ডাঁট, এমনকী ক্রিকেট মাঠের উইকেটের সৌজন্যে ডোমকলে মনোনয়নপত্রই জমা দিতে পারেননি বিরোধীরা। আর সেই কারণেই জলঙ্গির কয়েকটি আসন ছাড়া প্রায় গোটা ডোমকল মহকুমা জুড়েই কোথাও ভোট হচ্ছে না। সৌমিক হাসছেন, ‘‘ওঁদের তো সংগঠনই নেই প্রার্থীও আমাদের খুঁজে দিতে হবে!’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন