দুষ্কৃতী অধরা, কর্তা বলেন তদন্ত চলছে

৯ এবং ২৩ এপ্রিল আলিপুরের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে চার জন সাংবাদিককে নিগ্রহ করা হলেও কলকাতা পুলিশ এ দিন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলার পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

দুর্গাপুর পুলিশের পরে মুর্শিদাবাদ পুলিশ দেখিয়ে দিল, তারাও পারে। সোমবারের সাংবাদিক-নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে তারা। কিন্তু বুধবারেও ব্যতিক্রম থেকে গেল শুধু কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

৯ এবং ২৩ এপ্রিল আলিপুরের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে চার জন সাংবাদিককে নিগ্রহ করা হলেও কলকাতা পুলিশ এ দিন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলার পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারছে। কলকাতা পুলিশ পারছে না কেন? ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে। তদন্তের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হলে জানিয়ে দেওয়া হবে,’’ বুধবার বলেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকার।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়কে আক্রমণের ঘটনায় বুধবার দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা হল রামেশ্বরপুরের মানসুর শেখ এবং দেবকুণ্ডের আরজু শেখ। তাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। আপাতত চার সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে সেবাব্রতকে। ধৃত দু’জন ‘দলীয় কর্মী হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তথা বেলডাঙা-১ (দক্ষিণ) ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবু সইদ। তিনি বলেন, ‘‘ওই দু’জনকে ঠিক চিনতে পারছি না। তারা দলের কোনও পদে নেই। তবে দলীয় কর্মী হতে পারে।’’

Advertisement

সেবাব্রত ছাড়াও বড়ঞায় কৌশিক সাহা, ডোমকলে চিত্র-সাংবাদিক সাফিউল্লা ইসলাম এবং লালবাগে চিত্র-সাংবাদিক গৌতম প্রামাণিক আক্রান্ত হন। প্রত্যেকেই ঘটনার দিন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু দু’দিন পরেও পুলিশ কাউকেই ধরতে পারেনি। সাফিউল্লা বহরমপুরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি-শল্য বিশেষজ্ঞ এবং নাক-কান-গলার চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পেশের দিন ছবি তুলতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাঁর কানের নীচে ঘুষি মারে। সাফিউল্লা রাস্তায় পড়ে যান। চিকিৎসক তাঁকে চোয়ালের এক্স-রে করার পরামর্শ দেন এবং বিশ্রাম নিতে বলেন।

বীরভূমের রামপুরহাটে সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকার চিত্র-সাংবাদিক সব্যসাচী ইসলামকে রাস্তায় ফেলে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। তাঁর মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে এ দিন তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞেরা তাঁকে দেখছেন। হামলার ওই ঘটনাতেও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট ভিয়েনা থেকে এক বার্তায় পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিক-নিগ্রহে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের তরফে রবি আর প্রসাদ বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের উপরে ওই আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিত।’’ সাংবাদিক-নিগ্রহের তদন্তে বিশেষ দল গঠনের দাবিও জানিয়েছে ওই সংগঠন। তদন্তে গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

৯ এবং ২৩ এপ্রিল সাংবাদিক-নিগ্রহের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিস্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ইন্ডিয়া)-ও। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। সাংবাদিক-নিগ্রহে কলকাতা পুলিশ এ-পর্যন্ত এক জনকেও গ্রেফতার করতে না-পারায় ক্ষোভ বাড়ছে সাংবাদিকদের মধ্যে। যদিও কলকাতা প্রেস ক্লাব নীরব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন