State news

‘ভোটে জেতালে স্মার্টফোন দেব’ বলে বিতর্কে মুকুল রায়

মুকুলের এই প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অভিযোগ জানানো হবে নির্বাচন কমিশনেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ১৯:০৮
Share:

বিজেপি নেতা মুকুল রায়। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি-কে জেতালে তরুণ ভোটারদের সবাইকে স্মার্টফোন উপহার দেওয়া হবে বলে বিতর্কে জড়ালেন মুকুল রায়। শনিবার জলপাইগুড়ির ঘুঘুডাঙায় এক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন তৃণমূল এবং বর্তমান বিজেপি নেতা। সেখানেই তাঁর প্রতিশ্রুতি, জেলা পরিষদে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ১৮ বছরের বেশি বয়সের সব যুবক-যুবতীকে দেওয়া হবে স্মার্টফোন। মুকুলের এই প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। অভিযোগ জানানো হবে নির্বাচন কমিশনেও।

Advertisement

জলপাইগুড়ি সেই জেলাগুলোর অন্যতম যেখানে প্রায় পুরোদস্তুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটে। ১৯টা জেলা পরিষদ আসনের সব কটাতেই ভোট হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতেও হাতে গোনা আসনে শাসক দল তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পেরেছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে অবিভক্ত জলপাইগুড়িতে (তখন জলপাইগুড়ি ভেঙে আলিপুরদুয়ার তৈরি হয়নি) জেলা পরিষদ ভোটে বিপুল ভাবে জিতেছিল বামেরা। পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতেও অনেকটা সংখ্যাধিক্য ছিল বামেদের। যদিও পরবর্তীতে দলবদলের তোড়ে প্রায় সবই বামেদের হাত থেকে চলে যায় তৃণমূলের দিকে। এ বার বামেদের সরিয়ে জলপাইগুড়িতে তারা উঠে আসবে বলে খুবই আশাবাদী বিজেপি।

মুকুল রায় শনিবার ঘুঘুডাঙার সভায় বলেন, “যদি জেলা পরিষদে আমরা জিতি, ওই জেলা পরিষদ জেলার যত যুবক-যুবতী ১৮ বছরের ওপর রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে একটা করে স্মার্টফোন দেবে।” কেন স্মার্টফোনের প্রতিশ্রুতি তার ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করেন মুকুল। বলেন “আমার সরকার (অর্থাত্ মোদী সরকার) চাইছে ক্যাশলেস ট্র্যানজাকশন। এই ক্যাশলেস ট্র্যানজাকশন করতে গেলে স্মার্টফোন দরকার।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে খোঁচা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ওই খেলার পয়সা দিয়ে দিলাম, মেলার পয়সা দিয়ে দিলাম, লীলাখেলার পয়সা দিয়ে দিলাম— ও সব দোবো না। জেলা পরিষদ ১৮ বছরের বেশি সব যুবক-যুবতীকে স্মার্টফোন দেবে।”

Advertisement

দেখুন ভিডিও:

মুকুল রায়ের এই প্রতিশ্রুতিকে ঘুষের টোপ দিয়ে ভোট কেনার সামিল বলে মনে করছে তৃণমূল। জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের অন্যতম জেলা পরিষদ প্রার্থী বিধানচন্দ্র রায় রবিবার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মুকুলের বিরুদ্ধে।

তৃণমূল নেতা এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন— “মুকুল রায় নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন। কোথাও স্মার্ট ফোন দেওয়ার কথা বলছেন, কোথাও আবার ল্যাপটপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আমি পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করব, অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে।”

বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ। দলের প্রাক্তন সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আনন্দবাজারকে বলেন, “এতে বিধিভঙ্গের কী আছে! আমাদের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রেই আছে জিতলে স্মার্টফোন দেব।” তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করে শমীক আরও বলেন, “কারা বিধিভঙ্গের অভিযোগ করছে? গত পাঁচ বছর ধরে দেখে আসছি— মিউনিসিপালিটি থেকে শুরু করে যে কোনও নির্বাচনে রাজ্যের মন্ত্রীরা লালবাতি, নীলবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে প্রচারে যাচ্ছে।”

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও মনে করেন, মুকুল নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁর কথা— “এই রকম প্রতিশ্রুতি তৃণমূল আকছারই দিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর দোসর ছিলেন মুকুল। তিনি এমনটা করবেন এতে আর আশ্চর্য কী!”

শনিবার মুকুল রায় যখন জলপাইগুড়ির ঘুঘুডাঙায় বক্তব্য রাখছেন, তার আগেই রেলে চাকরির টোপ দিয়ে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে তাঁর শ্যালক সৃজন রায়কে গ্রেফতার করে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর থানার পুলিশ। এ প্রসঙ্গে মুকুল বলেন, “কয়েক মাস রেলমন্ত্রক চালিয়েছি। হঠাৎ ন’টা লোককে নিয়ে আসা হল। আর বলা হল, তারা নাকি তিন লক্ষ টাকা করে আমাকে দিয়েছে। টাকাটা নাকি নিয়েছে আমার শ্যালক। আমি নাকি উপস্থিত ছিলাম। আমার শ্যালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাকেও গ্রেফতারের ছক করা হচ্ছে।” মুকুলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন বলেই নিথ্যে মামলায় তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন