ফের মারমুখী শাসক দল, নিস্পৃহ পুলিশ, অসহায় অধীর

তিনি অধীর চৌধুরী। একদা তাঁর খাসতালুক মুর্শিদাবাদে তাঁর সামনেই কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর করে মনোনয়নের কাগজপত্র ছিঁড়ে দিল তৃণমূলের লোকজন। নিস্পৃহ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পুলিশ দেখল অধীরের প্রস্থান।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৬
Share:

দলীয় প্রার্থীদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে থানায় এসে অধীর দেখলেন দরজা বন্ধ। শনিবার। ছবি: কৌশিক সাহা

ভিড় থেকে মাঝে-মাঝেই শোনা যাচ্ছিল গলাটা— ‘‘তোমরাই তো বলছ ভাই, আমরা হেরে গেছি, মনোনয়নটা অন্তত জমা দিতে দাও!’’

Advertisement

তিনি অধীর চৌধুরী। একদা তাঁর খাসতালুক মুর্শিদাবাদে তাঁর সামনেই কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর করে মনোনয়নের কাগজপত্র ছিঁড়ে দিল তৃণমূলের লোকজন। নিস্পৃহ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পুলিশ দেখল অধীরের প্রস্থান। ভিড় ঠেলে বেরিয়ে অধীর বলছেন, ‘‘দেখলেন তো আমার সামনেই মনোনয়নের কাগজপত্র ছিঁড়ল তৃণমূলের গুন্ডারা আর পুলিশ বোবা হয়ে থাকল!’’ থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে বন্ধ ফটকের বাইরেও তাঁকে প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ।

যা দেখে, কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে সদ্য তৃণমূলে পা রাখা এক নেতাকে বলতে শোনা গেল, ‘‘বছর চারেক আগে এই কান্দিতেই মিথ্যে মামলা নিয়ে স্মারকলিপি দিতে এসে মঞ্চ থেকে উনি থানার বড়বাবুকে তলব করেছিলেন। পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা বলতে বাধ্য করেছিলেন। ইতিহাসের কী পরিহাস!’’

Advertisement

রাজ্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করে ইতিমধ্যে হাইকোর্টে মামলা করেছেন অধীর। সব প্রার্থী যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, জেলার পুলিশ সুপারদের তা নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত। সেই কাগজ হাতে নিয়েই শনিবার কান্দিতে মহকুমাশাসকের অফিসে যাচ্ছিলেন অধীর। সঙ্গে ছিলেন দলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা। সেই সময়ে কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তৃণমূলের বাহিনী এসে চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

তবে গোলমালের মধ্যেও অধীরের কাছে কেউ ঘেঁষেননি। তিনি পুলিশের তৈরি বাঁশের ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বারবার চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘যদি আমরা হেরেই গিয়ে থাকি, মনোনয়ন জমা করতে দিচ্ছো না কেন?’’ তবে, চার বছর আগের সেই হারানো দাপট আর ফেরেনি। কেউ কানে তোলেনি সে কথা। পরে কিলোমিটার খানেক হেঁটে চলে দলীয় কর্মীদের নিয়ে গিয়েছিলেন কান্দি থানায়। তবে, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ঘণ্টা খানেক পরে থানায় ঢোকার অনুমতি মিললেও খানিক পরেই বেরিয়ে আসেন তিনি। পরে পুলিশের গাড়িতে সাকুল্যে চার কংগ্রেস প্রার্থীকে নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন।

তৃণমূলের কান্দি মহকুমা সভাপতি গৌতম রায় অবশ্য দাবি করেন, “আমি দাদাকে (অধীরকে) বলেছি, তোমার প্রার্থীদের আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও। আমি নিজে দাঁড়িয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করব। কিন্তু তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন দেখে কেউ বিরোধী দলের প্রার্থী হতে চাইছে না। কী আর করা যাবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন