বোমা, মারধরে রেহাই পেলেন না নেতারাও

বহরমপুরে ব্লক অফিসের ঢিল ছোড়া দূরত্বে পঞ্চাননতলায় পুলিশের সামনেই লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১৬:৩৭
Share:

নির্বিঘ্নে মনোনয়ন জমা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বাস্তবে তা হল না। সোমবারের মনোনয়নপর্ব ছিল সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত। মার খেলেন বিরোধী, এমনকি তৃণমূলের বিধায়করাও।

Advertisement

বহরমপুরে ব্লক অফিসের ঢিল ছোড়া দূরত্বে পঞ্চাননতলায় পুলিশের সামনেই লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন জেলা কংগ্রেসনেত্রী মৌসুমি বেগম-সহ কয়েক জন। মনোজবাবুকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে কংগ্রেস দফতরের কাছে আক্রান্ত হন মালদহ দক্ষিণের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁর গাড়ির সামনে বোমা পড়ে। ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়িটি। রঘুনাথগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামানের বাড়ির সামনেও বোমা পড়ে। সুতির কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন রেজার অফিসেও বোমা মারা হয়। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে গৃহবন্দি হয়ে ছিলেন তিনি। বোমা পড়েছে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের বাড়িতেও। তাঁর অভিযোগ, গুলিও চালানো হয়েছিল। কিন্তু তা লাগেনি। লালবাগ ও নবগ্রামে সিপিএমের পার্টি অফিসে বোমা ছোড়া হয়। কান্দিতে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বিজেপি নেতার।

জনপ্রতিনিধিদের আক্রান্ত হওয়ার প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধায়ক, সাংসদ বলে কি আলাদা ভাবে দেখতে হবে? সকলেই কর্মী। মনোজবাবুকে মারা হয়েছে না উনি নিজে পড়ে গিয়েছেন, দেখতে হবে। উনি তো এমনিতেই মাঝেমধ্যে পড়ে যান!’’

Advertisement

রানাঘাটে এক বিজেপি প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমা পড়ে। ধোড়াদহ ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দোগাছি গ্রামে দুষ্কৃতীদের মারে মাথা ফেটেছে এক কংগ্রেস নেতার। কৃষ্ণনগরেও বিজেপির কয়েক জনের মাথা ফাটে। গোলমাল হয় হাঁসখালি ও ফুলিয়ায়ও। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে পাঁশকুড়ার প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দাশঠাকুর-সহ দলের ১৫ জন নেতা-কর্মী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যকেও মারধর করা হয়। চিকিৎসার জন্য প্রথমে ডেবরা হাসপাতালে, পরে তাঁকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিজের দলেরই কর্মী-সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হন আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমান। মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের জেলা অফিসে রফিকুরকে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ করা হয়। যদিও হেনস্থার কথা অস্বীকার করে রফিকুর বলেন, ‘‘ধাক্কাধাক্কি হয়নি। কয়েকজন বিক্ষোভ দেখিয়েছে।’’ প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধে এই ঘটনা।

এ দিন তৃণমূলের সঙ্গে বাম ও বিজেপি-র সংঘর্ষ হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডিতে। মনোনয়ন ঘিরে সংঘর্ষ হয় বারুইপুর মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে। পরে বিজেপি বারুইপুর-ক্যানিং রো়ড অবরোধ করে। তৃণমূল বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তখন বিজেপি কার্যালয়ের ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আসানসোলে কয়েকটি জায়গায় পথ আটকানো হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের। আরামবাগ, জাঙ্গিপাড়ায় সিপিএমের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ রয়েছে। আক্রান্ত বিজেপি কর্মীরাও। পার্থবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম মিলে ভোট প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে চাইছে। পরিকল্পনা করে এ সব করছে। আমাদেরই পাঁচ জন বিরোধীদের হাতে খুন হয়েছেন। গণতন্ত্র রক্ষার চেষ্টা করছি বলেই আমাদের মার খেতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন