ঘাসফুলের উড়ান-ঝড় সর্বত্র। বিরোধীদের উপস্থিতি নামমাত্র। কিন্তু তার মধ্যেও রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে জোড়াফুলে বিঁধেছে পদ্ম-কাঁটা! সেই তল্লাটগুলি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রাথমিক ফলাফলের নিরিখে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ও বীরভূমের একাংশে দাপট দেখিয়েছে বিরোধীরা। উত্তরবঙ্গের মালদহ, দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের চিত্রও একই রকম। শাসক দলের সঙ্গে সেখানে সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। কোথাও কোথাও নির্দল বা বামেরা।
আদিবাসী এলাকায় গেরুয়া শিবিরের এই উত্থানকে স্বতঃস্ফূর্ত বলে মানতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের সীমানায় ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ারের মতো এলাকায় বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে লোক ঢুকেছে। এখানে বিজেপি মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। রাজ্য পুলিশকে না জানিয়ে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফও সক্রিয় হয়েছিল। ও-পার থেকে লোক ঢুকেছে। এ সব ভাবতেই পারছি না!’’ জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘জনজাতিরাই তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল। ওরাই এ বার তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলবে।’’
ঝাড়গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে তৃণমূল যে প্রার্থী পাচ্ছে না, তা আগেই জানিয়েছিলেন মমতা। এ দিন ফলাফলের পরেও তিনি বিজেপি-মাওবাদী জোটের ইঙ্গিত করেন। কারণ এ বার ঝাড়গ্রামে ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ৪১টি পেলেও বিজেপির দখলে গিয়েছে ২৪টি। নির্দল তিনটি এবং অমীমাংসিত ১১টি। এক সময়ে মাওবাদী-ত্রস্ত লালগড়, বেলপাহাড়ি, জামবনি, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকে তৃণমূল কার্যত ধরাশায়ী বিজেপির কাছে। বলরামপুরের সাতটি পঞ্চায়েতই এ বার বিজেপির দখলে। ঝাড়খণ্ড লাগায়ো এই জেলার বরাবাজারের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে আটটি জিতেছে বিজেপি। রাইপুর, সারেঙ্গাতেও বিজেপি জিতেছে অনেকগুলি গ্রাম পঞ্চায়েত।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির ভীমপুর, সাতপাটি, গড়মাল, ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, মণিদহ, কনকাবতীর মতো বিজেপি-অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির ফল ভাল হয়েছে। বিজেপির জিতেছে পিংবনি, জিরাপাড়া, মাকলি ও আমলাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল দখলে রাখতে পেরেছে গোয়ালতোড়, পাথরপাড়া, গোয়ালডাঙা, সরবোথ, পিয়াশালা ও জগারডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত।
আরও পড়ুন: জিতেও হেরে ফের জিতলেন আনসার
উত্তরবঙ্গের মালদহের হবিবপুর, বামনগোলা, গাজোল, পুরাতন মালদহ এবং চাঁচলের কিছু এলাকায় আদিবাসী বেশি। এই সব এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করেছে বিজেপি। একই ছবি উত্তর দিনাজপুরেও।