সাংবাদিক নিগ্রহে ধৃত ৬, জামিনে প্রশ্ন

মনোনয়নের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাণ্ডবেশ্বরের নানা এলাকা থেকে তাদের ধরা হয়েছে। ওই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না তা দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১৫:১০
Share:

দুর্গাপুর আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। নিজস্ব চিত্র

মনোনয়নের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাণ্ডবেশ্বরের নানা এলাকা থেকে তাদের ধরা হয়েছে। ওই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না তা দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক মোদী জানান, ধৃত শেখ সাহেব, প্রসেনজিৎ কুইলা, শেখ নুর মহম্মদ, শেখ মোসারফ, শেখ আলাউদ্দিন ওরফে কালু ও শেখ গেন্ডার বাড়ি পাণ্ডবেশ্বরে। মঙ্গলবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে জামিন মঞ্জুর করা হয়। ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও মহকুমাশাসকের অফিসে ঢুকে তাণ্ডব চালানোয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা হল কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পুলিশ সে নিয়ে কিছু বলতে চায়নি।

সোমবার পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের খবর সংগ্রহে গিয়ে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে জনা দশেক সাংবাদিক আক্রান্ত হন। অভিযোগ, এক সাংবাদিককে মহকুমাশাসকের অফিসের তিন তলা থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে ফের পেটানো হয়। বাধা দিতে গেলে আক্রান্ত হন আরও কয়েকজন। আহত দুই সাংবাদিককে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন। দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ জানানো হয় নির্বাচন কমিশনেও।

Advertisement

আক্রান্ত সাংবাদিকদের অভিযোগ, মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে যেতেই তেড়ে আসে দুষ্কৃতীরা। মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। শুধু সাংবাদিকেরা নন, নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরাও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যে সংস্থা ক্যামেরা ও চিত্রগ্রাহক সরবরাহ করেছিল তাদের তরফে মহকুমাশাসকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে পাণ্ডবেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান ডিসিপি (পূর্ব)। ধরা হয় ছ’জনকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ ভাবে আটকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। মনোনয়ন জমার সময়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে এক সঙ্গে অনেকে মহকুমাশাসকের অফিসে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটানোর অভিযোগের পরেও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নেহাতই চাপে পড়ে ধরা হয়েছে ছ’জনকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ধরার সাহস নেই পুলিশের।’’ ডিসিপি (পূর্ব) শুধু বলেন, ‘‘কী ভাবে ১৪৪ ধারা অমান্য করে অনেকে ভিতরে ঢুকেছিল, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’

সোমবার লাউদোহায় বেশ কয়েক ঘণ্টা নিরুদ্দেশ ছিলেন বিজেপি-র আসানসোল জেলা কমিটির সম্পাদক তথা উখড়া সারদাপল্লির বাসিন্দা জিতেন চট্টোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিল। তাঁর পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। তবে পরে আর কোনও লিখিত অভিযোগ জিতেনবাবু করেননি।

জিতেনবাবুর দাবি, দুর্গাপুর-ফরিদপুরের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কিছু প্রার্থীকে নিয়ে তিনি ব্লক অফিসে মনোনয়ন জনা দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ জনা পনোরো তৃণমুল কর্মী বিএলএলআরও কার্যালয়ের সামনে আমাকে আটকায়। গালিগালাজ করে মোবাইল কেড়ে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। ছেড়ে দিতে বললে মারধরও করে। সন্ধে ৬টা নাগাদ নাচন রোড ধরে ইছাপুরের কাছে এসে মোবাইল ফেরত দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।’’ তিনি জানান, তার আগে বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁর স্ত্রী লাউদোহা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির কথায়, “কাউকে অপহরণ করা হয়নি। বিজেপি নেতারা বুঝে গিয়েছেন মানুষ তাঁদের সঙ্গে নেই। তাই গল্প ফাঁদছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন