State News

প্রিসাইডিং অফিসারের রহস্যমৃত্যু, উত্তাল রায়গঞ্জ, এসডিও-কে জুতো, চড় ভোটকর্মীদের

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন। ওই দিন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাসিন্দা রাজকুমার রায় প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে ইটাহারের সোনারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট করাতে গিয়েছিলেন।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ১৬:২২
Share:

ধুন্ধুমার: প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যুর প্রতিবাদে মহকুমাশাসককে ঘিরে বিক্ষোভ ভোটকর্মীদের। চলল মারধরও। বুধবার রায়গঞ্জে। ইনসেটে রাজকুমার রায়।— নিজস্ব চিত্র।

এক প্রিসাইডিং অফিসারের রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ। সকাল থেকেই শহরের ঘড়িমোড় অবরোধ করে রাখেন কয়েকশো ভোটকর্মী। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে রায়গঞ্জের এসডিও পৌঁছলে বুধবার দুপুরে তাঁকে ওই ভোটকর্মীরা হেনস্থা ও মারধর করেন বলে অভিযোগ। কারণ, তিনি তখন মন্তব্য করেছিলেন, রাজকুমার আত্মহত্যা করেছেন। সেই শুনেই ক্ষুব্ধ ভোটকর্মীরা চড়াও হন তাঁর উপরে। তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়। চড় মারা হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে থেকে জুতোও ছুড়ে মারা হয়। মাথায় সেলুনের নোংরা জল ঢেলে দেওয়া হয়। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও মার খান।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন। ওই দিন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাসিন্দা রাজকুমার রায় প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে ইটাহারের সোনারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই দিন দুপুর থেকেই তিনি নিঁখোজ হয়ে যান। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ওই দিন দুপুর দুটো নাগাদ বুথ থেকেই অপহরণ করা হয় তাঁকে। এর পর মঙ্গলবার রাতে রায়গঞ্জের সোনাডাঙিতে রেললাইনের ধার থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার এবং ভোটগণনার দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়ে বুধবার সকাল থেকেই শহরের ঘড়িমোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন কয়েকশো ভোটকর্মী।

রাজকুমারের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে বুথ থেকে কেউ বা কারা অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। কিন্তু তারা কারা, তা নিয়ে পুলিশের কাছে করা অভিযোগে কোনও উল্লেখ করা হয়নি। এক জন ভোটকর্মী সরকারি কাজে গিয়ে কী ভাবে নিঁখোজ হলেন, কী ভাবেই বা তিনি খুন হয়ে গেলেন— এ সব প্রশ্ন তুলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, ইটাহারের বিডিও এবং থানার ওসি যে গোটা ঘটনা নিয়ে কোনও তৎপরতা দেখাননি, সেই অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

দেখুন ভিডিয়ো

করণদিঘির রহটপুর হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন রাজকুমার। রবিবার রাতেই তিনি ভোটের কাজে ইটাহার গিয়েছিলেন। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল। দুপুর দুটোর পর থেকে আর কোনও যোগাযোগ না হওয়ায়, ওই দিন রাতে তাঁরা ইটাহারের বিডিও রাজু লামার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বিডিও জানান, প্রিসাইডিং অফিসার রাত আটটা পর্যন্ত বুথে ছিলেন। যদিও পরে চাপের মুখে মঙ্গলবার দুপুরে বিডিও ইটাহার থানায় একটি নিঁখোজ ডায়েরি করেন।

আরও পড়ুন
‘বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ওরা বলল, ছবি তুললেই মেরে দেব’

এর পরেই মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রাজকুমারের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রশাসনের একটা অংশ দাবি করেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সেই দাবি মানতে নারাজ রাজকুমারের পরিবার। তাঁরা সিবিআই তদন্ত চেয়ে পুলিশের কাছে দাবি জানান। এর পরেই এ দিন সকাল থেকে কয়েকশো ভোটকর্মী ঘড়িমোড় অবরোধ করে নিজেদের দাবি জানাতে থাকেন।

আরও পড়ুন
সকালেই পৌঁছে গিয়েছিল রাজ্যপালের রিপোর্ট, তার পরেই হিংসা নিয়ে চড়া স্বর প্রধানমন্ত্রীর

দুপুরের দিকে রায়গঞ্জের এসডিও থেণ্ডুপ নামগিয়েল শেরপা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সেই সময় ভোটকর্মীরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। দাবি জানান, ভোট গণনার দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। পাশাপাশি তাঁরা রাজকুমারের মৃত্যুর তদন্ত ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এসডিও সেই সময় এক বার মন্তব্য করেন, ওই ভোটকর্মী আত্মহত্যা করেছেন। তখনই খেপে ওঠেন ভোটকর্মীরা। এসডিওকে ধাক্কাধাক্কি এবং হেনস্থা করার পাসাপাশি তাঁর গায়ে জল ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁকে জুতো ছুড়ে মারা হয় বলেও অভিযোগ।

রায়গঞ্জের ডিএসপি প্রসাদ প্রধান এ নিয়ে বলেন, ‘‘কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায় তা আমরা দেখছি। ওই ভোটকর্মী কী বাবে মারা গিয়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন