শুধু কালি লাগানোই কাজ! ক্ষুব্ধ কলেজের শিক্ষককুল

ক্ষোভ মূলত কাজ বিলিবণ্টন নিয়ে। যেমন কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরকে দেওয়া হয়েছে চতুর্থ পোলিং স্টাফের কাজ। যাঁদের কাজ মূলত ভোটারের আঙুলে কালি দেওয়া! কমিশনের এই ধরনের নির্দেশে কলেজ-শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৫৩
Share:

পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে প্রার্থী-পদ, মনোনয়নপত্র পেশ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, রক্তপাতের ঘটনা অনেক ঘটেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটকর্মীদের ক্ষোভও এ বার প্রকাশ্যে চলে এল। অসন্তোষ প্রকাশ করছেন কলেজ শিক্ষকেরা।

Advertisement

ক্ষোভ মূলত কাজ বিলিবণ্টন নিয়ে। যেমন কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরকে দেওয়া হয়েছে চতুর্থ পোলিং স্টাফের কাজ। যাঁদের কাজ মূলত ভোটারের আঙুলে কালি দেওয়া! কমিশনের এই ধরনের নির্দেশে কলেজ-শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ।

প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই ভোটকর্মী হতে হয় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের। কেউ কেউ সেই কাজ করতে সহজে রাজি হন না। ফলে টানাপড়েন চলে। এ বার ক্ষোভ মূলত কাজের ধরন নিয়ে। ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৫৮ বছরের অমিত রায় জানাচ্ছেন, তাঁকে চতুর্থ পোলিং স্টাফের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর কেডি কলেজ অব কমার্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বিবেকানন্দ দাশ মহাপাত্রকেও তা-ই। রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা এই বিষয়ে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনে।

Advertisement

দমদম মতিঝিল রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, তাঁদের কলেজ থেকে বেশ কয়েক জনকে ভোটের কাজে ডাকা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, এমনকি অধ্যক্ষেরাও ভোটের কাজে ডাক পেয়েছেন। এই সব বিষয়ে আপত্তি-অভিযোগ জানাতে জেলাশাসক বা মহকুমাশাসকের দফতরে গেলে সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ।

নির্বাচন কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের একাধিক নির্দেশ অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে কারণ দেখিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভোটে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া যায়। সে-ক্ষেত্রেও পদ ও বেতন অনুযায়ী ‘ডিউটি’ দেওয়ার কথা। কিন্তু এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ জানান, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরদের বেতনহার রাজ্য সরকারের উপসচিবের পদের সমান। এবং সেটা বিডিও-র থেকে বেশি। দেখা যাচ্ছে, অধ্যক্ষকে প্রিসাইডিং অফিসার, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরকে চতুর্থ পোলিং স্টাফের কাজ দেওয়া হয়েছে। ‘‘যদি নির্বাচনে কাজ দেওয়া হয়, তা হলে ন্যূনতম দায়িত্ব হিসেবে এঁদের দিতে হবে ‘মাইক্রো অবজার্ভার’-এর কাজ। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্ব বণ্টনে এ-সব নিয়ম মানা হয়নি,’’ অভিযোগ শ্রুতিনাথবাবুর। কলেজের চুক্তি-ভিত্তিক বা আংশিক সময়ের শিক্ষকদের চতুর্থ পোলিং স্টাফের কাজ দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই সব শিক্ষক-পদ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের পদের সমতুল্য। এই বিষয়েও রাজ্য নির্বাচন কমিশনে প্রতিবাদপত্র জমা দিয়েছে ওয়েবকুটা।

স্কুলেও পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়। কলকাতার একটি স্কুলের এক প্রবীণ শিক্ষক জানান, তিনি এর আগে প্রায় সব নির্বাচনেই প্রিসাইডিং অফিসারের পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু এ বার তাঁকে করে দেওয়া হয়েছে তৃতীয় পোলিং স্টাফ! অর্থাৎ যাঁরা স্বাক্ষর করতে পারবেন না, তাঁদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন