State News

জঙ্গলমহল বিরূপ কেন? ধাক্কা খাচ্ছে তৃণমূলের উন্নয়ন-তত্ত্ব

ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির অধিকাংশ বিধায়ক, সাংসদই তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনঘন এই সব এলাকা সফর করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৫:০০
Share:

—ফাইল চিত্র।

জঙ্গলমহলে তৃণমূল হারল কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে দলের উন্নয়ন-তত্ত্ব। ঝাড়গ্রাম থেকে পুরুলিয়া যে সব আদিবাসী এলাকায় তৃণমূল জিততে পারেনি, সেখানে উন্নয়নের ‘সুফল’ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। ওই সব জায়গায় যাঁরা মাটিতে দাঁড়িয়ে ভোট করেছেন, তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, সংগঠন না থাকলে শুধু উন্নয়ন দিয়ে কিছু হয় না।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে উন্নয়নের যাবতীয় বন্দোবস্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও কেন সেখানে আশানুরূপ ফল হয়নি, তা দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখা হবে।’’

বাম আমলে জঙ্গলমহলে আমলাশোলের মতো অনাহার-ক্লিষ্ট গ্রামের নিদর্শন প্রকৃত অর্থেই অনুন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। যার জেরে রাজ্য রাজনীতিও তোলপাড় হয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এখন উন্নয়ন হলেও মানুষ কি তা পাচ্ছেন না, ভেবে দিশাহারা তৃণমূল।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির অধিকাংশ বিধায়ক, সাংসদই তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনঘন এই সব এলাকা সফর করেন। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে উন্নয়নের কাজ খতিয়ে দেখা হয়। তা সত্ত্বেও শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে উন্নয়ন না পৌঁছনোর অভিযোগ যদি এসে থাকে, তা হলে তার ‘দায়’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর বর্তায়। অভিযোগ উঠছে, জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।

কী বলছেন তাঁরা? ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সোরেনের বক্তব্য, ‘‘আমাকে নিয়ে এই অভিযোগ যদি দলে উঠে থাকে, সেটাই লিখে দিন।’’ গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ মনে করেছে বিজেপির কাছে গেলে আরও বেশি উন্নয়ন পাবে। তা ছাড়া, তৃণমূলের টিকিট না পাওয়া নিয়েও এলাকায় বিক্ষোভ ছিল।’’ পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর অবশ্য মত, সিপিএম এবং কংগ্রেস মুছে যাওয়ায় বিরোধী পরিসরটা বিজেপি দখল করেছে। তা ছাড়া, পড়শি ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি লোকবল ও অর্থবল পেয়েছে।

ঝাড়গ্রামের পরাজিত সভাধিপতি সমায় মান্ডির মন্তব্য, ‘‘নেত্রী উন্নয়ন করবেন আর তাতে ভোট হবে, তা হয় নাকি!’’ পুরুলিয়ার পরাজিত সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তা হলে কি উন্নয়ন করাটাই অপরাধ হয়েছে!’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গোটা দেশেই আদিবাসী জনজাতির মধ্যে বিজেপির প্রভাব বাড়ছে। এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি।’’ তৃণমূল নেতৃত্বও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, ছোট ছোট জনজাতির সমস্যা, চাহিদা বুঝতে ঘাটতি রয়েছে। এমনকী, সাঁওতালি ভাষার স্বীকৃতি দিতেও দেরি হয়েছে। যার সুযোগে আদিবাসী উন্নয়ন মঞ্চের মতো সংগঠন স্থানীয় স্তরে মাথা তুলেছে। এ সবই পরাজয়ের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন